লুইস-ভিলিয়ার্স ঝড়ের দিনে ওয়াহাবের হ্যাট্রিক

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ গতকাল হঠাৎ ঝড়ের কবলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম! ক্রিকেটবোদ্ধারা যার নামাঙ্করণ করেছেন ‘এভিন ল্ইুস’ নামে। এবারের আসরের ঢাকা প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের মুখোমুখি হয়েছিল কুমিল্লা।  লুইস করলেন বিস্ফোরক সেঞ্চুরি।

ক্যারিবিয়ান ওপেনারকে সঙ্গ দিলেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমান। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে ২৩৭ রান করে কুমিল্লা। বিপিএলে এর চেয়ে বড় সংগ্রহ আছে কেবল একটি। গত শুক্রবার এই চট্টগ্রামেই চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ২৩৯ রান করেছিল রংপুর রাইডার্স।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবালের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দেন লুইস। পরপর দুই বলে তামিম ও এনামুল হককে বিদায় করেন মাহমুদউল্লাহ। লুইসের সঙ্গে ৯৭ রানের জুটি গড়ে ফিরে যান ইমরুল। অধিনায়ক ২১ বলে করেন ৩৯ রান। থিসারা পেরেরা ও শহিদ আফ্রিদির দ্রুত বিদায়ের পর শামসুর রহমানের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে ৫৯ রানের জুটি উপহার দেন লুইস। লুইস ৪৯ বলে ১০ ছক্কা ও পাঁচ চারে অপরাজিত থাকেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ১০৯ রানে। বিপিএলে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ক্রিস গেইলের পর কেবল তিনিই এই টুর্নামেন্টে একাধিক সেঞ্চুরি করলেন।

ব্র্যাথওয়েট, নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি দলকে টানতে। দুই জনই ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় ফিরে যান সহজ ক্যাচ দিয়ে। তাদের বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি খুলনার ইনিংস। দলটি শেষ ৬ উইকেট হারায় ১৪ রানে। আঁটসাঁট বোলিংয়ে বাঁহাতি পেসার ওয়াহাব ৩ উইকেট নেন ১৪ রানে। ১৯তম ওভারে পরপর তিন বলে ডেভিড ভিসা, তাইজুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাদ্দামকে ফিরিয়ে খুলনাকে থামিয়ে দেন ওয়াহাব। এবারের আসরে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন পাকিস্তানের বাঁহাতি এই পেসার। এর আগে রংপুর রাইডার্সের অখ্যাত বোলার আলিস আল ইসলামের হাত ধরেই এসেছিল প্রথম হ্যাটট্রিক। লেগ স্পিনার আফ্রিদি ২৭ রানে নেন তিনটি। দারুণ সেঞ্চুরিতে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়া ক্যারিবিয়ান পেসার ওপেনার লুইস জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

ima

অপরদিকে অপর ম্যাচে গতকাল এবি ডি ভিলিয়ার্স ঝড়ে উড়ে গেল সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস। পারেন নি ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। ব্যর্থ আরেক বিষ্ফোরক ব্যাটসম্যান রাইলি রুশোও। তাকে কী? তারপরও যে দলে আছে ডি ভিলিয়ার্স-অ্যালেক্স হেলসের মত মারদাঙ্গা ব্যাটসম্যান, তাদের কাছে ১৮৭ রান তো মামুলিই! গতকাল সেটিই করে দেখাল রংপুর রাইডার্স।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ১৮৬ রান তোলে ৬ উইকেট হারানো ঢাকা ডায়নামাইটস। জবাবে ১০ বল আর ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে তরী ভেরায় মাশরাফির দল। ডি ভিলিয়ার্স অপরাজিত থাকেন কাটায় কাটায় ১০০ রানে। তার ৫০ বলের ঝড়ো ইনিংসটি ৮টি চার ও ৬টি ছক্কায় মোড়ানো। ৫৩ বলে ৮৫ রানে অপরাজিত থাকা আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হেলসের চার ৮টি আর ছক্কা ৩টি।

এর আগে টস জিতে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ কাজে লাগিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৮৬ রান তুলেছে ৬ উইকেট হারানো ডায়নামাইটস।

একদিকে মাশরাফি, গেইল, রুশো, ডি ভিলিয়ার্স আর অন্যদিকে সাকিব, রাসেল ও কাইরন পোলার্ড। নিঃসন্দেহে এবারের বিপিএলের সবচেয়ে তারকা সমৃদ্ধ দল এই দুটি। আর এই ম্যাচ দেখতে দর্শকের ঢল নেমেছিল। ভিলিয়ার্স-হেলস। কঠিন মাচেও তৃতীয় উইকেট রেকর্ড গড়া ১৮৪ রানের জুটিতে দলকে ‘সহজ জয়’ এনে দেন দু’জনে।

এবারের বিপিএলে দুই হেভিওয়েটের প্রথম লড়াইয়ে দুই রানের রোমাঞ্চ জিতে নিয়েছিল ঢাকা। চট্টগ্রামে ৮ উইকেটের এই বিশাল জয়ে দারুণ প্রতিশোধও নিয়ে নিলো বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। সেই সঙ্গে ১০ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থানে উঠে এলো মাশরাফির দল। এক মাচ কম খেলে ৫ জয় নিয়ে তালিকার চারে নেমে গেছে ঢাকা। সমান নয় ম্যাচে ছয়িটি করে জয় নিয়ে পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে দুইয়ে কুমিল্লা ও তিনে চিটাগং। শীর্ষ চারে উঠার লড়াইয়ে ১০ ম্যাচে ৫ জয় নিয়ে এখনও লড়ে যাচ্ছে পাঁচে থাকা রাজশাহী। সম্ভাবনা আছে ১০ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে থাকা সিলেটেরও। আর ১১ ম্যাচে মাত্র দুই জয়ে এরই মধ্যে বিপিএল থেকে বিদায় নিশ্চিত করেছে তলানির দল খুলনা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ২০ ওভারে ২৩৭/৫ (তামিম ২৫, লুইস ১০৯*, এনামুল ০, ইমরুল ৩৯, থিসারা ১১, আফ্রিদি ১, শামসুর ১৫; শরিফুল ৪-০-৫৩-১, সাদ্দাম ৪-০-৫৯-০, ভিসা ৪-০-৪৯-০, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৩২-০, ব্র্যাথওয়েট ৪-০-৪২-২)।
খুলনা টাইটান্স : ১৮.৫ ওভারে ১৫৭ (টেইলর ৫০, জুনায়েদ ২৭, মালান ১৩, মাহমুদউল্লাহ ১১, ব্র্যাথওয়েট ২২, শান্ত ১৪, ভিসা ৮, আরিফুল ২, তাইজুল ১, শরিফুল ০*, সাদ্দাম ০; সাইফ ৩-০-২৯-১, মেহেদি ৪-০-২৮-১, শহীদ ২-০-২৪-০, ওয়াহাব ২.৫-০-১৪-৩, আফ্রিদি ৪-০-২৭-৩, থিসারা ৩-০-২৮-১)।

ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : এভিন লুইস (কুমিল্লা)।

Print Friendly

Related Posts