এএইচএম নোমান
উদযাপিত হলো ১৯৬৯ ঢাকা মেডিকেল কলেজ কে-২৮ হেলথ ফাউন্ডেশন আয়োজিত সুবর্ণ জয়ন্তী-২০১৯ সতীর্থ সম্মিলন। এ উপলক্ষ্যে গৌরব-ঐতিহ্য মেডিকেল কলেজের সম্মুখ ভাগের ঝকঝকা ছবির প্রচ্ছদ দিয়ে সম্পাদনা পরিষদ প্রধান ডাঃ সৈয়দ মোস্তাক আহমদ সোবহানের সম্পাদনায়, ডাঃ মহিব্বুল ইসলামের প্রকাশনায় ১৮৫ পৃষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়।
ছাত্র কলেজ পেশা পারিবারিক জীবন ছবি স্বামী-স্ত্রীর ঠিকানা সহ ‘বয়ে যাওয়া সেই দিনগুলি’ সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, ‘মা ও শিশু স্বাস্থ্যের বড় প্রতিবন্ধকতা অপুষ্টি’ প্রফেসর ডঃ খুরশিদ জাহান, `Few funny stories & memories from DMC life’ ডাঃ মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, ‘DMC days memories’ Md. Azmat Hossain, ÔSatisfaction & Happiness’ (কবিতা) Mohiuddin, ‘ঢাকা মেডিকেলে পঞ্চাশ বৎসরের পরিক্রমা’ (ছন্দ কবিতা) ফজলুর রহমান, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ আমাদের অহংকার: কিছু স্মৃতি’ তাহমিনুর রহমান সজল, ‘বন্ধুত্ব, ভালবাসা আর মানবিকতা’ (কবিতা) মহিউদ্দিন, ‘সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য’ মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন, Message from the president, Mohebbul Islam; Editorial, Syed Mostaq A Sobhan ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ লেখা এবং অংশগ্রহণকারীদের নামের তালিকা সম্বলিত পুস্তিকাটি সকলের হাতে-হৃদয়ে যত্ন সহকারে শোভা পেয়েছে।
তিন দিনের শুরু ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ডিএমসি ক্যাম্পাসে জয়ন্তী সম্মিলন দিয়ে। ২৫ জানুয়ারী বাসে বিমানে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার গমন, বিলাসি হোটেল সীগাল এ থাকা, সী-বীচ উপভোগ, রেজিষ্ট্রেশন, স্যুভিনির, প্রোগ্রাম ব্রিফ, ‘কিরে কেমন আছিস’ শুভেচ্ছা বিনিময়, সর্বোপরি শিলিগুড়ি থেকে আগত ডাঃ সুশান্ত দেয়া নৈশভোজ ছিল উচ্ছাসে ভরপুর।
২৬ তারিখের সারাদিনটি ছিল কলেজ হোষ্টেল-বাড়ী ও ছাত্রকালকে প্রাধান্য দিয়ে স্মৃতি চারণের। মুরগি ধরা, দুষ্টামি করে ডাব নারিকেল চুরি করে খাওয়া, বড় ভাইদের মন জয় করে ফ্রী চা-সিঙ্গারা খাওয়া, লিঙ্গ দুর্বলতা, হাসি-তামাশা, কড়া শিক্ষকদের সামলানো, গোঁফ কৌশল ইত্যাদি বিষয়ক গালগল্পে ছিল ভরপুর। শিক্ষকমন্ডলীর মধ্যে সর্বশ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ডাঃ ইউসুফ আলী, কাদরী, ফিরোজা, রাব্বী, মতিউর রহমান, আবদুল আলিম চৌধুরী, শামসুদ্দিন, অদুদ, নওয়াব আলী, লতিফ, মনির উদ্দিন, খালেকসহ প্রায় সকলের কথাবার্তা উচ্চগর্ব কন্ঠে স্মৃতিতে-বচনে উচ্চারিত হয়েছে।
যারা অতিথি ছিলেন অর্থাৎ কারো স্ত্রী, কারো স্বামী তারাও রস-তস কথা স্মৃতিতে অংশগ্রহণে বাদ যাননি। আমিও সুযোগ নিলাম। এপ্রোন পরা মেয়েদের দেখতে ভাল লাগত, তা থেকেই অগ্রীম বুকিং আজকের ডাঃ রাজিয়া এবং বটম লাইনিং মাতৃত্বকালীন ভাতা কেন্দ্রিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, কর্মসংস্থান সম্বলিত ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ প্রসঙ্গ টেনে উপস্থিত সেবক ডাক্তার তৎ ফাউন্ডেশনকে দারিদ্র ও বৈষম্য দূরীকরণ ঝউএ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার আহবান জানালাম।
মজা হয়েছে যখন আনুষ্ঠানিক পূর্তি দিনে স্বামী-স্ত্রী একে একে মঞ্চে উঠে পরস্পর পরস্পরকে চাদর, মাফলার ও স্ত্রীদের মাথায় ফুলের টোপর বিনিময় ক্ষণে ২-৩ যুগল আবেগে উচ্ছাসে প্রেমের ছোঁয়ায় চুমু-আলিঙ্গন, দোলা নাচও দেখায়ে দিলেন, যা সে-ই পুরোনো দিন ও বয়সী দিনগুলোকে একাকার করে দিল পুরো বল রুম। পুরোনো দিনের সিনেমা হল বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিনগুলোতে সেই শিস দেয়াও বাদ যায়নি। অথচ সবাইর কিন্তু নাতি নাতনী পর্যন্ত এসে গেছে এই ফাঁকে। বিকালে ইনানী বিচ ঘুরা, ডাবপানি খাওয়া শেষে, সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় হোটেল পুল সাইডে খোলা আকাশ নিচে সবুজ চত্বরে সাজান মঞ্চে স্থানীয় সাংস্কৃতিকদের উপজাতি নাচ গান, পুরানো দিনের গান বাদ্য যন্ত্রের ঝংকারে তালে তালে বয়স্বী ডাক্তারেরা যেন সবাই পুনঃযৌবন প্রাপ্ত হয়ে স্টেজ সামনে দেশী-বিদেশী নাচ তালে যুগল-বেযুগল মাতায়ে তুলছিল। ইরানী, ফ্যাশন ডিজাইনার, নোয়াখাইল্লা ভাবী, টাই স্যুট গং বয়সীদের নাচ তাল মূর্ছনা ছিল বয়সীদের অনবদ্য আলোকচ্ছটার।
গালা ডিনার শেষে শুরু আবার স্মৃতি আসর হল রুমে। তৃষ্ণার্ত সতীর্থরা এর নাম দিল ‘দোস্ত দিন’। অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, ইন্ডিয়া থেকে ধেয়ে আসা এই দোস্তরা, একটানা স্কটল্যান্ড থেকে দম্পতি ডাঃ শওকত আরার মিষ্টি জামাইসহ আরো অনেকে স্ব-স্ব স্থান থেকে প্লেনে ঢাকা পৌঁছে সরাসরি মেডিকেল ক্যাম্পাসে যোগ দিয়ে, সেই সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার পর্যন্ত নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছিল এই অনাবিল মিলন স্বাদ মেলায়।
বাড়ীঘর সংসার শশুর শাশুড়ি বাপ চাচা দাদা ছেলে মেয়ে সন্তান কে কোথায়, যেন ভুলেই গেছে ৫০ বছর স্মৃতি পূর্তি ধারায়। পাশাপাশি শোক প্রস্তাব ও দোয়াও হয়েছে প্রায় দুইশতদের মাঝ থেকে পরপারে চলে যাওয়া ৩২ জন সাথীদের জন্য। জান্নাতবাসীদের মধ্যে ডাঃ খুরশিদ আরা কচির নামে তার স্বামী স্কলারশীপ দিচ্ছেন। অষ্ট্রেলিয়াবাসী রোখসানা ভবিষ্যতের জন্য তাদের লিগাসী রাখার বাসনা জানান দিলেন স্মৃতিকথার আসরে। ছাত্রাবস্থায় মাত্র দুই জন ছিলেন অ ডাক্তার স্বামীসহ বিবাহিতা, আর এক নরম মনের ডাক্তার ছাত্রী বিয়েই করবেন না বার বার জানান দিলেও এখন এক ডাক্তার কন্যা ও এক ছেলের মা সহ সুখের সংসারী।
’৬৯ এর প্রতিজন ডাক্তারই উঁচু মানে প্রতিষ্ঠিত দেশে-বিদেশে। প্রায় এক চতুর্থাংশই বিভিন্ন দেশে বসবাসরত, বাকীরা দেশে। এরা সবাই ’৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭০’র সাইকোন (ডাঃ মোস্তাকের পিতা পটুয়াখালী অঞ্চলের চর কলমী জলোচ্ছাসে মারা যান লাখ জনের সলিল সমাধির মধ্যে), বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ’৭১’র মুক্তিযুদ্ধের অংশী-সাক্ষী, প্রচন্ড গর্বিত লাল সবুজ পতাকাবাহী দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা মেধাবী পেশাধারীদের এক দৃষ্টান্ত ডিএমসি কে-২৮। ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াত বাংলাদেশ বিমান চার্টার এক ফাইট ভর্তি ছাড়াও অন্য বিমানে এবং কিছু সড়ক পথে উপভোগ লক্ষ্যে বাসে ২৭ তারিখ রোববার ঢাকা ফিরেছেন। শুটকি মাছ ও মহেষখালীর মিষ্টি পান আনতে ভুল করেননি অনেকেই। (নামসমূহ ইংরেজী থেকে বাংলায় লিখায় বানান বিভ্রাট হতে পারে-এজন্য দুঃখিত)।
আয়োজক কমিটি বিভিন্ন ইভেন্টস এ শাড়ী, সেলওয়ার কামিজ, স্যুট, রঙ্গীন পাঞ্জাবী, গেঞ্জী এভাবে পোশাক ফ্যাশন ও নির্দিষ্ট করে ভিন্নতার ছাপ রেখেছেন। সাংগঠনিক কমিটির আওতায় প্রকাশনা, নিবন্ধন, আবাসন, যানবাহন, অভ্যর্থনা, সাজসজ্জা ও সাংস্কৃতিকসহ মোট ৮ টি সাব কমিটি করেছে। সেখানেও সকলের দক্ষতা ও পটুতাসহ মুন্সিয়ানা ছিল। তারা যে মানবিক পেশাজীবী হিসাবে সার্থক, শুধু তাই নয়- প্রাসঙ্গিক পারিবারিক নাগরিক সামাজিকসহ অন্য ক্ষেত্রেও তাদের নিপুণতা ছিল প্রাঞ্জল। পেশা ও ব্যস্ততার মাঝেও ফাউন্ডেশন বনভোজন, নৌবিহার, অনলাইন ফোরাম, চিকিৎসা সহায়তা, প্রয়াত সাথী সন্তানদের মেডিকেল কলেজ ভার্সিটিতে ভর্তি, দোয়া মাহফিল, মিলন বৈঠক ইত্যাদি সাংগঠনিক কাজ করে থাকেন। Friendship for Ever ধারী ২০০৫ এ প্রতিষ্ঠিত ডিএমসি কে-২৮ হেলথ ফাউন্ডেশন তার ধারক ও বাহক।
এএইচএম নোমান: প্রতিষ্ঠাতা, ডরপ এবং গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী-২০১৩
nouman@dorpbd.org