শিউল মনজুর ॥ সবার প্রিয় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বসন্ত ঋতুর নানা রঙ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের নানা পেশার মানুষ ঋতুরাজ বসন্তের নান্দনিক সময়কে উপভোগ করার জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভিড় করছেন।
প্রায় দুইমাস শীতের ঠান্ডায় গৃহবন্দী থাকার পর মৃদু উষ্ণতার এই ঋতু যেন সকল বয়সী মানুষের বেড়ানোর সুবর্ণ সময়। তাই এই সময়টাতে ভ্রমণ পিপাসু এদেশের সাধারণ মানুষেরা কক্সবাজারসহ দেশের আকর্ষণীয় স্থানে ঘুরে বেড়ান। এ দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখার মত মনোরম প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান বহু রয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতই হচ্ছে সবচাইতে আকর্ষণীয় চোখ জুড়ানো দর্শনীয় স্থান। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২৫ কিলোমিটার লম্বা এই সমুদ্র সৈকত।
দৈর্ঘ্যর দিক থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতই পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ট। তাই সারা বিশ্বর ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নিকট বেড়ানোর জন্যে একটি আকর্ষণীয় স্থান। প্রতি বছর এ সময়টাতে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এখানে ঘুরতে বা বেড়াতে আসেন। ভোরের সূর্যোদয় ও দিনশেষে সন্ধ্যার সূর্যাস্ত দেখে চোখের ও মনের তৃষ্ণা নিবারণ করেন। দিনের বেলায় তীর ঘেঁষে সমুদ্রের নোনাজলে সাঁতার কাটেন, শহরের দূষণীয় পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে সৈকতের নির্মল বাতাসে ঘুরে বেড়ান, সমুদ্রের সীমাহীন জলরাশি ও গর্জন শুনতে শুনতে আনন্দের দীর্ঘসুখ সঞ্চয় করেন। যা পৃথিবীর অন্য কোথাও এই সৈকতের মত আনন্দ পাওয়া যাবে না।
সৈকতকে বিভিন্ন পয়েন্টে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কলাতলী পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধ পয়েন্ট ও শৈবাল পয়েন্ট অন্যতম। প্রত্যেকটি পয়েন্টকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দর্শনার্থীরা সৈকতের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি তারা শামুক বা ঝিনুকের তৈরী গৃহসজ্জার বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করতে পারেন। তা ছাড়া চীনা, তাইওয়ানি ও বার্মিজ বিভিন্ন জিনিস রয়েছে যা বিক্রি করে কয়েকহাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিদিন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
এ ছাড়াও সৈকতে নানা ধরনের ফেরিওয়ালা রয়েছে। বোট বাইক চালিয়ে ও ঘোড়ার মাধ্যমেও অনেক কিশোর-যুবক প্রতিদিন বহু অর্থ উপার্জন করে পরিবার লালন করছে । লাল সেডের সিটিং টেবিল ভাড়া দিয়েও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা উপার্জন করে থাকে ।
বলা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ সুরক্ষা করছে না তা নানাভাবে আমাদের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে।
তবে অনেক পয়েন্টে দর্শনার্থীরা অসচেতনভাবে চিপসের প্যাকেট, কলার খোসা, চুইংগাম এবং ধুমপানের জিনিস ফেলে পরিবেশের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বা ছোট ছোট জাহাজের মাধ্যমে মহেশখালির বাঁকে ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়েও সমুদ্রের নানা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। অবশ্য সেন্টমার্টিন দ্বীপটি দেখতে খুবই সুন্দর। কক্সবাজার থেকে অদূরে হিমছড়ি ও ইনানি বিচ দেখেও অনেক আনন্দ পাওয়া যায়।
চট্রগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। ছোট বড় সবধরণের গাড়ি বা বাস চট্রগ্রাম-কক্সবাজার রোডে চলাচল করে। ঢাকা থেকে বিমানসহ এসি বাস কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচল করে। বিভিন্ন দামের উন্নতমানের আবাসিক হোটেলও রয়েছে। এর মধ্যে পর্যটন কর্পোরেশনের রয়েছে ৪টি মোটেল।
এগুলো হচ্ছে হোটেল উপল, হোটেল শৈবাল, হোটেল লাবণী ও হোটেল প্রবাল। এর মধ্যে হোটেল উপল ব্যতীত অন্যান্য হোটেল গুলি পর্যটন কর্পোরেশনের অধীনে ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রত্যেকটি হোটেলের সাথে রয়েছে মান সম্মত খাবারের হোটেল।
ব্যক্তি মালিকানায় বা প্রতিষ্ঠানের নামেও রয়েছে বেশ কিছু আর্ন্তজাতিক মান সম্মত হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট।
ঋতুরাজ বসন্তের নাতিশীতোঞ্চ সময়টাকে বেছে নিয়ে কক্সবাজারের নান্দনিক সৌন্দর্য অবগাহনের জন্যে দেশ বিদেশের অনেকেই এসেছেন। ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে গেল রাজধানী ঢাকা থেকে আসা, আশা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র মোঃ ফয়জুর রহমান খান রোমেনের সাথে।
রোমেন বললেন, কক্সবাজার সী বিচ আমাদের পর্যটনের সবচাইতে বড় প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পদ। দেশের পরিবেশ ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রেও এর অবদান অনেক। দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের জন্যে এই সৈকতকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
সৈকতকে আকর্ষণীয়ভাবে সাজানোর পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার দিকটি বিশেষ বিবেচনা করতে হবে। তাহলে এই সমুদ্র সৈকত থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে। এজন্য তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বছরের যে কোন সময়, বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবার নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়ানো যায়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত প্রতিদিন বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করছে। আসুন আমরা সমুদ্র অবগাহন করে নিজেদেরকে সমুদ্রের মতো উদার হতে সাহায্য করি।
sheoulmanjur@yahoo.com