অগ্নিঝরা মার্চ স্বাধীনতার মার্চ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ। এ মাসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙ্গালির জীবনে নানা কারণে মার্চ মাস অন্তনির্হিতি শক্তির উৎস।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে আগুন জ্বলে উঠছেলি- সে আগুন যেন ছড়িয়ে পরে বাংলার সর্বত্র। এর পরে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়দফা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মার্চ বাঙ্গালীর জীবনে নিয়ে আসে নতুন বারতা।

এ বছরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এর আগে ২৫ মার্চ রাত একটার অল্প পরে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রেফতার করে তার বাড়ি থেকে।

একাত্তরের গোটা মার্চ মাসই ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে দীর্ঘ ২৪টি বাঙালী জাতিকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচীর ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে। লক্ষ্য স্থির করে, ধাপে ধাপে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার উপযোগী পরিস্থিতির শুরুটা হয়েছিল মূলত ৬ দফার মধ্য দিয়েই। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর এ দেশ যে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে এগোচ্ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় ’৭১ এর মার্চেই।
ঊনসত্তরের বিশাল গণআন্দোলনে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতন হলো। ক্ষমতা দেয়া হলো সর্বকালের নৃশংস দানব ইয়াহিয়া খানের কাছে। নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধু ’৭০-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনকে নিলেন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণভোট হিসেবে। আর ব্যালটে তিনি এমন অভাবিত বিজয় অর্জন করলেন যখন পাকিস্তানীদের বুলেট, ট্যাঙ্ক, কামান সবই তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল। এ নির্বাচনে বাঙালীরা বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাঁকে অভূতপূর্ব একটা বিজয় উপহার দিয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিক এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। অধিবেশন স্থগিতের খবর ছড়িয়ে পরার পর ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিমানবন্দর এবং পিআইএর মতিঝিল অফিসের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস ছেড়ে চলে যান। ফলে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে প্রদেশের বিভিন্ন রুটে এবং আন্তঃদেশীয় রুটে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেতারে ইয়াহিয়ার বিবৃতি প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালী জাতি অপেক্ষা করতে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাদের কী নির্দেশ দেন। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভুট্টো এবং জেনারেলদের মধ্যকার ঐকমত্যের বিষয়টি সামনে এলো। এ রকম একটি ষড়যন্ত্র হতে পারে এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পূর্বেই ধারণা করেছিলেন এবং তার অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার করে জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন।
সেদিন হোটেল পূর্বাণীতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় ৬ দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ চলছিল। পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক শেষে হোটেল পূর্বাণীতে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলার জনগণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
Print Friendly

Related Posts