সন্তানের সামনেই ট্রাকে পিষ্ট হয়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : চোখের সামনে মায়ের এমন মৃত্যু! বিমর্ষ হয়ে পড়েছে সুস্ময়।  ব্যাংক থেকে বের হয়ে তার মা তাকে নিয়ে পোস্তগোলা ঢালে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ করেই একটি ট্রাক রাস্তার পাশে এসে তার মায়ের ওপর উঠিয়ে দেয়। এতে তিনি ছিটকে পড়লে ট্রাকটি টান দেওয়ায় তার মা চাকার নিচে চলে যান। চালক পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে থাকা লোকজন নিয়ে ট্রাকটি ঠেলে তার মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে সে পেছনে থাকায় রক্ষা পায়।

ঈদে কেনাকাটার জন্য কুয়েতপ্রবাসী স্বামী আসাদ মিয়া টাকা পাঠিয়েছিলেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ সুমা আক্তারের কাছে। সোমবার দুপুরে তিনি ছোট ছেলে মোহাম্মদ সুস্ময়কে নিয়ে শ্যামপুরের একটি ব্যাংক থেকে সেই টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু পোস্তগোলা ব্রিজের ঢালে একটি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঈদে কেনাকাটা বাদ দিয়ে ঘাতক ট্রাকের কারণে দুই সন্তানকে মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হলো।

স্বজনরা বলছেন, ৩৮ বছর বয়সী সুমা সন্তানসম্ভবা ছিলেন। তার আগের দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে তন্ময় কলেজে পড়েন। সুস্ময় এবার এসএসসি পাস করেছে।

দিনের বেলায় ঢাকায় ট্রাক চালানো নিষিদ্ধ থাকলেও শ্যামপুর-পোস্তগোলা, কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় তা পুলিশের চোখের সামনেই চলে। রহস্যজনক কারণে এসব থামাতে পুলিশকে তৎপর হতে দেখা যায় না। এর মধ্যেই সেই ট্রাকচাপায় প্রাণ হারালেন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী।

সুস্ময়ের বড় ভাই তন্ময় জানান, ব্যাংক থেকে টাকা ওঠানোর পর ছোট ভাইকে নিয়ে ঈদের জন্য কেনাকাটার কথা ছিল মায়ের। কিন্তু দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে গিয়ে মায়ের নিথর দেহ দেখতে পান। তারা দুই ভাই চিন্তাও করতে পারছেন না এভাবে তাদের মা না ফেরার দেশে চলে যাবেন। তারা ঘাতক চালকের ফাঁসি দাবি করেন।

স্বজনরা জানান, সুমা আক্তার দুই সন্তান নিয়ে কেরানীগঞ্জের জিন্দাপীর এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সেখান থেকেই শ্যামপুরে এসেছিলেন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঈদের কেনাকেটা করতে। কিন্তু ঘাতক ট্রাকচালক সবকিছুই এলোমেলো করে দিয়েছে।

শ্যামপুর থানার এসআই দ্বীন ইসলাম জানান, তারা খবর পেয়ে আহত সুমাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনায় দায়ী ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। এর নিবন্ধন নম্বর দেখে পলাতক চালক ও মালিকের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

Print Friendly

Related Posts