যেভাবে পর্দা উঠল ক্রিকেট বিশ্বকাপের

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ইংলিশ কমেডিয়ান ও টিভি ব্যক্তিত্ব প্যাডি ম্যাগুইনেসের দরাজ কণ্ঠে যখন শোনা গেল ‘ওয়েলকাম হোম’। তার সঙ্গে গলা মেলালেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসার অ্যন্ড্রু ফ্লিনটফ ও ভারতীয় মডেল শিবানি ধান্দেকার।

অনেকেই ভাবতে পারেন পরিবারের হারিয়ে যাওয়া কোনো সদস্যকে বরণ করে নিতে দরজায় দাঁড়ানো অপর সদস্যরা। ব্যাপার অনেকটা সেরকমই। ১৯৭৫ সাল থেকে এই নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর হয়েছে ১২টি। যার মধ্যে ৫টিরই আয়োজক ইংল্যান্ড! ‘ঘরে ফিরেছে বিশ্বকাপ’ এই আবেগ নিয়েই পথচলা শুরু হলো আইসিসি বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের।

ইংল্যান্ডে সর্বশেষ বিশ্বকাপ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ২০ বছর আগের সে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান লেজেগোবরে হয়েছিল বৃষ্টির কারণে। ক্রিকেট-তীর্থ লর্ডসের অনুষ্ঠানে বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়েছিল ফোটানোর জন্য আনা বাজিগুলোও। এমনকি তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের দেয়া উদ্বোধনী ভাষণটিও শোনা জায়নি ভাঙা মাইকের কারণে! উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা প্রত্যাশামতো করতে না পারার দুঃখটা ভোলার কথা নয় আয়োজকদের। এবারও চোখ রাঙানি ছিল বৃষ্টির। তবে এবার আর কোন ঝুঁকি নেয়নি আয়োজকরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিসরটা কমিয়ে বড় কোন উন্মুক্ত জায়গায় না গিয়ে করছে ‘দ্য মলে’।

বাকিংহাম প্যালেসকে পেছনে রেখে হয়েছে আনুষ্ঠানিকতা। আগেই জানানো হয়েছিল খেলাধুলার মাধ্যমে গান-বাজনার পরিবেশনা দিয়েই এই এক ঘণ্টা বুঁদ করে রাখবে গোটা বিশ্বকে। তবে তার ছিঁটেফোটাও চোখে পড়েনি। ইংলিশ মিউজিক তারকা জন নিউম্যানের এক পরিবেশনা দিয়ে শুরু। তার সঙ্গে অংশগ্রহণকারী ১০ দলের জার্সি গায়ে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে নাচলেন তরুন-তরুনীরা।

গানের সঙ্গে ক্রিকেটে যোগসূত্র বেঝাতে ৬০ সেকেন্ডের চ্যালেঞ্জ ‘গল্লি ক্রিকেট’ নিয়ে হাজির দশ দলের সাবেক কিংবদন্তিরা। যেখানে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তারকা স্পিনার অব্দুর রাজ্জাক ও মডেল অভিনেত্রী জয়া আহসান। এছাড়া নিজ নিজ দলের হয়ে খেলেছেন স্যার ভিভ রিচার্ডস, ব্রেট লি, অনিল কুম্বলে, মাহেলা জয়াবর্ধনে, জ্যাক ক্যালিস ও আজহার আলীরা। আফগানিস্তান দলের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসূফজাই। এই গল্লি ক্রিকেটে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে (৬৯) ৫ রানে হারিয়ে শিরোপা জয়ের আভাসটা কি দিয়ে রাখল ইংল্যান্ড (৭৪)।

555

এর পরই আগমন সেই স্বপ্নের ট্রফির। হাতে করে মঞ্চে ঝা চকচকে বিশ্বসেরার ট্রফিটি বয়ে নিয়ে আসেন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক।

সবশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল বিশ্বকাপের থিম সং ‘স্ট্যান্ড বাই’-এর মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশনা দিয়ে। সোনাল দাব্রালের লেখা ও মাইকেল ম্যাকক্লিয়ারির হৃদয়ছোঁয়া সুরের এই গানটির মাধ্যমে এক সুরে বেঁধেছে ক্রিকেট ও সংস্কৃতিকে। যদিও কথা ছিল গানটির মঞ্চায়ন করবে বৃটিশ পপ ব্যান্ড রুডিমেন্টালের গোটা দল। কিন্তু শেষ সময় অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে অর্ধেক দল সেখানে চলে যাওয়ায় দেখা গেছে কিছুটা ছন্দপতন। তাদের বদলে গানটি গেয়েছেন লরিন। তাতে গানটির মাহাত্ব কমেনি এতটুকুও। এর পরই ছিল দৃষ্টি নন্দন এক পরিবেশনার মাধ্যমে বৃটিশ তথা ক্রিকেটের গোড়াপত্তন যাদের হাত ধরে সেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে ব্যাটে-বলের পথচলার ইতিহাস ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা।

তবে শুধুই ইংল্যান্ড কেন, বিশ্বকাপ হবে সকলের। সেই সুর বেঁধেছে বিশ্ব যাত্রীসেবা প্রতিষ্ঠান উবারের ‘ওয়ে-ও, ওয়ে-ও’ গানটির পরিবেশনা। ৫টি অংশগ্রহণকারী দেশের শিল্পীদের সমন্বিত এক প্রয়াসে উদ্বেলিত করেছেন গোটা সময়। পাশাপাশি মঞ্চ আলোকিত করেছেন জ্যামাইকার বিশ্ব নন্দিত তারকা ঝামিয়েল, ব্রিটেনের ক্যাথরিন টেইলর ডসন, নিউজিল্যান্ডের সিম্বা দিয়াল্লো এন্ড চইর গ্রুপ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার খলিৎশা ইউনাইটেড মাম্বাজো।

ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কাকে ছাড়া ক্রিকেট কি কল্পনা করা যায়! আর সেই সত্যকে ফুটিয়ে তোলার জন্যই বুঝি মঞ্চে উপমহাদেশের গায়কদের আগমন। ভারতের জনপ্রিয় পপ তারকা সোনাম হাজির তার ইংরেজ ঢংয়ে ভারতীয় হিন্দি গান নিয়ে। মঞ্চে যতক্ষণ ছিলেন মাতিয়েছেন গোটা বিশ্ব থেকে লটারির মাধ্যমে আসা হাজার চারেক ভাগ্যবান দর্শকদের। একদিন বাদেই (আজ) মূল লড়াইয়ের কারণে অংশগ্রহণকারী কোন দলের সদস্য এমন কি অধিনায়করাও এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে সম্মত হননি। তবে ঠিকই আমন্ত্রিত অতিথিদের আসন শোভা বাড়িয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তি তারকারা।

এই আয়োজন কেবলই মাঠের বাইরের। আজ থেকে শুরু ময়দানী লড়াই। লন্ডনের ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু হচ্ছে ৪৪ দিনের এই মহাযজ্ঞ। আগামী ১৪ জুলাই ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসের ফাইনাল দিয়ে যবনিকা পত্তন হবে ক্রিকেট শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াইয়ের।

Print Friendly

Related Posts