বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে স্মার্টফোন আদমানির উপর আরোপ করা বাড়তি ১৫ শতাংশ বর্ধিত কর প্রত্যাহার চেয়েছে বাংলাদেশ মোবাইলফোন ব্যবসায়ী এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। আজ, ১৯ এপ্রিল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০১৯-২০ সালের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরে বিএমবিএ সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু বলেন, ‘’নতুন আমদানি শুল্ক ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে বাধা তৈরি করবে। অবৈধভাবে স্মার্টফোন আমদানি উৎসাহিত হবে। এতে করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়বে।’’
নতুন শুল্ক কাঠামো বাস্তবায়ন হলে বছরে প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকার অর্থপাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে বিএমবিএ সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু বলেন, কেবল অর্থ পাচার নয় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যাবে। বছরে প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে সরকার। যেখানে আমদানি শুল্ক কমালে সরকারে বাড়তি ১,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ হলো প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী সরকার যে হারে আমদানি শুল্ক নিবে এতে করে অবৈধভাব স্মার্টফোন আমদানি আরো বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ মোবাইলফোন ব্যবসায়ী এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘মূল্যবৃদ্ধির ফলে স্মার্টফোন ক্রেতাসাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সুযোগ হাতছাড়া হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্মার্টফোনের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধির গতি হবে শ্লথ। সরকারের চালু করার নতুন প্রযুক্তি (ফোরজি, এলটিই) সেবা থেকে বঞ্চিত হবে নগর থেকে গ্রাম- সবখানের মানুষ। এটি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে বিরাট অন্তরায়। ‘’
বর্তমানে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্কের কারণে স্মার্টফোন আমদানিতে মোট করের পরিমাণ ৩২ শতাংশ। প্রস্তাবিত ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে সর্বমোট করের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫৭ শতাংশ। এতে করে আমদানি করা স্মার্টফোনের মূল্যবৃদ্ধি পাবে। আমরা আশঙ্কা করছি, মূল্যবৃদ্ধির ফলে স্মার্টফোন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ক্রমাগত হ্রাস পাবে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পথে বড় অন্তরায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী সংখ্যা ২০ শতাংশ। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এর গড় ৫১ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রদেয় স্মার্টফোন কর ৩১.৭৫ শতাংশ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী কর হবে ৫৭.৩১ শতাংশ; যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি এবং বিশ্বের যেকোন দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
ভারতে সিবিইউ (CBU) ও এসকেডি (SKD) ’র করের পার্থক্য ১৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে এর পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে ৪০ শতাংশের উপরে।
বাংলাদেশ মোবাইলফোন ব্যবসায়ী এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)’র লিখিত বক্তব্যে বলা হচ্ছে, আমদানি নির্ভর মোবাইল শিল্পের সাথে দেশের প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও লক্ষাধিক পরিবার পরোক্ষভাবে জড়িত। স্মার্টফোন আমদানীর উপর অতিরিক্ত ২৩ শতাংশ করারোপের ফলে এসব পরিবারের ভবিষ্যৎ ও জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। স্মার্টফোন সংযোজন কারখানা স্থাপন করার মাধ্যমে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করা সম্ভবপর হতে পারে; তবে তা সময়সাপেক্ষ। এই মানবিক দিকটি বিবেচনার দাবি করছি।
বাংলাদেশে ৯০ শতাংশেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। মোবাইল ফোনের সঙ্গে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন, শিক্ষাব্যবস্থা, কৃষি উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রাইড শেয়ারিংসহ অনেক সেবা জড়িত। এ অবস্থায় যদি স্মার্টফোন আমদানির উপর অতিরিক্ত শুল্ক ও কর আরোপ করা হয়, তাহলে পুরো শিল্পই হুমকির মুখে পড়বে।
স্থানীয়ভাবে সংযোজন কারখানা স্থাপনকে উৎসাহিত করতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন তথা স্মার্টফোন শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। আমরাও বিশ্বাস করি এদেশে স্মার্টফোনের কারখানা স্থাপিত হলে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতি অধিক সমৃদ্ধ হবে, সেইসাথে ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন কারখানা স্থাপন তথা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য পারিপার্শ্বিক প্রস্তুতি নিতে আরো অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারের নিকট অনুরোধ করছি।