টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস শিল্পের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী
বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সেমস্ গ্লোবাল আয়োজন করেছে “২০তম টেক্সটেক বাংলাদেশ-২০১৯”। এটি দক্ষিণ এশিয়ার টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস শিল্পের অন্যতম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। ৪-৭ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি), কুড়িল, ঢাকায় চার দিন ব্যাপী এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এই প্রদর্শনীর পাশাপাশি সেমস গ্লোবাল আয়োজন করেছে “১৬তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন অ্যান্ড ফেব্রিক শো-২০১৯” এবং “৩৮তম ডাই-ক্যাম বাংলাদেশ এক্সপো -২০১৯”।
এ উপলক্ষ্যে ৪ সেপ্টেম্বর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার সেমিনার হলে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি।
এছাড়া, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, মনসুর আহমেদ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যান্যুফেক্চারাস্ এন্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনস্ (বিকেএমইএ), এস. এস. সারোয়ার, গ্রুপ সিইও, সেমস গ্লোবাল এবং মিস মেহেরুন নেসা ইসলাম, প্রেসিডেন্ট এন্ড গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সেমস গ্লোবাল।
আয়োজিত প্রদর্শনীতে স্বাগতিক বাংলাদেশ, চীন, ভারত, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, জাপান, তুরস্ক, ইতালি, শ্রীলঙ্কাসহ মোট ২৫টি দেশের প্রায় ১২৫০টি প্রতিষ্ঠান ১৫০০টি স্টলের মাধ্যমে তাদের পণ্য ও পরিষেবাদি সেবা প্রদর্শন করবে।
পোশাক শিল্প খাতের এ সর্ববৃহৎ প্রদর্শনীতে আগত দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, সুতা, কাপড়ের বিশাল সমাহার। এছাড়া, থাকছে কাপড় উৎপাদক মেশিনারিজ, নিত্য নতুন টেকনোলজি ও রাসায়নিক দ্রব্যের বিশাল সমাহার। প্রদর্শনীতে আগত দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং দর্শক, ভোক্তা, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ ও যুগোপযোগী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে যেখানে কার্যকরী ও ফলপ্রসু যোগাযোগের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা আধুনিক প্রযুক্তি ও সেবার সাথে পরিচিত হতে পারবেন।
এছাড়া, ভোক্তা, উদ্যোক্তা, আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের সরাসরি সাক্ষাৎ এবং আলাপচারিতার ফলে সকলের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে উঠবে এবং নতুন ব্যবসায়কি খাত প্রসার করবে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষগুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
সেমস গ্লোবাল বিগত ২০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ, ব্রাজিল ও শ্রীলংকায় টেক্সটেক, ইয়ার্ন এন্ড ফেব্রিক শো এবং ডাই-ক্যাম সফলভাবে আয়োজন করে আসছে এবং ইতোমধ্যে উক্ত শোগুলো এ বছর থেকে মরক্কোতে আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত অর্থবছর বাংলাদেশ টেক্সটাইল ও পোশাক রফতানি শিল্পে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা বার্ষিক আয়ের ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বর্তমানে এ শিল্প হতে বছরের প্রায় ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে যা ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ, পোশাক শিল্প খাতে প্রায় ৪৪ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী।
টেক্সটাইল শিল্পগুলো বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। দ্রুত অগ্রগতির ফলে টেক্সটাইল শিল্প এখন রাসায়নিক ক্রমবর্ধমান চাহিদার মুখোমুখি হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয় যে স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্পগুলো প্রতি বছর প্রায় ১.৪৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করবে এবং চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানি দ্বারা পূরণ করা হবে। বাংলাদেশের এ খাতে বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দেওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে সরকার এরই মধ্যে কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমান সররকার গত ১০ বছরে দেশের দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, এতে পোশাক খাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
এছাড়া, এ ধরনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে ও দক্ষ মানবশক্তি বৃদ্ধি পাবে মর্মে আশা করা যায়। বর্তমান সরকার পোশাক পণ্য রফতানিতে সোর্স ট্যাক্সকে ০.০৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.২৫ শতাংশে নামিয়েছে। গত তিন দশক ধরে, আমাদের পোশাক শিল্প সরকারের নীতিগত সমর্থন, বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাদের গতিশীলতা এবং অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী শ্রমিকদের কারণে এক অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এখন আরএমজি ইউনিটের সংখ্যা প্রায় ৩,০০০ এরও বেশি এবং রফতানি উপার্জন একশ শতাধিক দেশ এবং প্রায় ১৫০ টি আন্তর্জাতিক পোশাক ব্র্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক করে ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ইএসটেক্স- বুয়েট ও সেমস্ গ্লোবাল আয়োজিত “গ্রীন কেমিস্ট্রি এন্ড সাসটেইনেবল কেমিক্যাল ম্যানেজমেন্ট ফর বাংলাদেশ টেক্সটাইল গ্রোথ ” শীর্ষক একটি সিম্পোজিয়াম ৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ :৩০ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, সেমস গ্লোবাল ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বহুজাতিক প্রদর্শনীর আয়োজক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে সংস্থাটি বিশ্বের ৭টি দেশে ১০টি এ্যাসোসিয়েট শাখার মাধ্যমে বছরে ৪০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আয়োজন করছে। এছাড়া, সেমস ইউএসএ, সেমস চায়না, সেমস ইন্ডিয়া, সেমস বাংলাদেশ, সেমস শ্রীলংকা, সেমস মরক্কো এবং সেমস ব্রাজিল নামে নিজস্ব অফিস পরিচালনা করছে এবং ৪টি মহাদেশে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
উল্লেখ্য, “২০তম টেক্সটেক বাংলাদেশ ২০১৯” এর অনলাইন মিডিয়া পার্টনার গোসোর্সিং৩৬৫.কম; টেকনিক্যাল পার্টনার ESTEX, BUET; ব্রডকাস্ট পার্টনার – ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন; মিডিয়া পার্টনার- দ্যা ডেইলি স্টার, দৈনিক সমকাল, রেডিও পার্টনার- রেডিও টুডে ৮৯.৬ এফএম; ম্যাগাজিন পার্টনার-টেক্সটাইল টুডে, টেক্সটাইল ফোকাস, এ্যাপারল ভিউ, ফিনটেক ও আইস বিজনেস টাইমস; মিডিয়া মনিটরিং পার্টনার- রায়ান্স আর্কাইভ লিমিটেড। হসপিটালিটি পার্টনার – এ্যাট আর্থ বিডি; ক্রিয়েটিভ পার্টনার – মার্কেট এজ লি : এবং আইটি পার্টনার – আমার টেক।
প্রদর্শনীগুলো প্রতিদিন সকাল ১০.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।