রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়: স্বর্ণকলম পুরস্কার পেলেন এই সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ। অসংখ্য জ্ঞানীগুণী জনের উপস্থিতিতে কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলে এক বর্ণময় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিযে সুর-অঙ্গন এই সম্মান তুলে দিল।
পুরস্কারের স্মারক এবং প্রতীকী সোনার কলম এ দিন কথাসাহিত্যিকের হাতে তুলে দিলেন আন্তর্জাতিক নাট্য ব্যক্তিত্ব শ্রী বিভাস চক্রবর্তী। এই পুরস্কার-অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, গান এবং আলোচনা।
এ দিন বাংলা বইয়ের পাঠভ্যাস নিয়ে দারুণ বক্তব্য রাখলেন বিশিষ্ট কবি কৃষ্ণা বসু। কবিতা পাঠ করেন স্বপ্নরাগ-এর কর্ণধার কৃষ্ণা গুহ রায়, গীর্বান পত্রিকার সম্পাদক তাপস গুপ্ত, রঞ্জনা রায়, শ্রীময়ী চক্রবর্তীরা।
সুর-অঙ্গন-এর কর্ণধার, বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী, শান্তিনিকেতনের অপর্ণা ব্যানার্জি বলেন- একাধারে কবি, ছড়াকার, গল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রপরিচালক, সম্পাদক এবং কথাসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহকে আমরা পুরস্কৃত করতে পেরে ধন্য। উনি যে শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের নির্দেশ অমান্য করে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই চোখ নিয়ে এখানে আসবেন, আমরা তা ভাবতেও পারিনি।
এ দিন সিদ্ধার্থ সিংহ সম্পর্কে নানান গুণীজনের আলোচনা থেকে জানা গেল- ২০২০ সালে ‘সাহিত্য সম্রাট’ উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে ‘বঙ্গ শিরোমণি’ সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম ছড়া ‘শুকতারা’য়। প্রথম গদ্য ‘আনন্দবাজার’-এ। প্রথম গল্প ‘সানন্দা’য়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার।
ছোটদের জন্য যেমন মৌচাক, শিশুমেলা, সন্দেশ, শুকতারা, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা, ঝালাপালা, রঙবেরং, শিশুমহল ছাড়াও বর্তমান, গণশক্তি, রবিবাসরীয় আনন্দমেলা-সহ সমস্ত দৈনিক পত্রিকার ছোটদের পাতায় লেখেন, তেমনি বড়দের জন্য লেখেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য। ‘রতিছন্দ’ নামে এক নতুন ছন্দের প্রবর্তন করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুশো পঁয়তাল্লিশটি।
তার বেশির ভাগই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব। এ ছাড়া যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে।
তাঁর লেখা নাটক বেতারে তো হয়ই, মঞ্চস্থও হয় নিয়মিত। তাঁর কাহিনী নিয়ে ছায়াছবিও হয়েছে বেশ কয়েকটি। গান তো লেখেনই। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে। তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কয়েকটি সিনেমায়। বানিয়েছেন দুটি তথ্যচিত্র। তাঁর লেখা পাঠ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে একত্রিশ তারিখের মধ্যে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, মুক্তগদ্য, প্রচ্ছদকাহিনি মিলিয়ে মোট তিনশো এগারোটি লেখা প্রকাশিত হওয়ায় ‘এক মাসে সর্বাধিক লেখা প্রকাশের বিশ্বরেকর্ড’ তিনি অর্জন করেন।
ইতিমধ্যে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, নতুন গতি পুরস্কার, ড্রিম লাইট অ্যাওয়ার্ড, কমলকুমার মজুমদার জন্মশতবর্ষ স্মারক সম্মান, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের ‘শ্রেষ্ঠ কবি’ এবং ১৪১৮ সালের ‘শ্রেষ্ঠ গল্পকার’-এর শিরোপা।
আজ সেই তালিকায় নতুন করে সংযোজিত হল- স্বর্ণকলম পুরস্কার।