বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ একুশের কথা, কবিতা আর গানে গানে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হলো সাহিত্য আসর। সাহিত্যের ছোট কাগজ “স্রোত”এর আয়োজনে মহান একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্যারিসের একটি হলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত হয় ।
বিশিষ্ট কবি, লেখক ও বাচিকশিল্পী রবিশঙ্কর মৈত্রীর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এই আসরে একুশের আলোচনা, কবিতা, কথা আর গানে গানে আরো চমকপ্রদ ও প্রাণবন্ত করেন যারা, তারা হলেন- বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি আমীরুল আরহাম, কবি ও লেখক রবিশঙ্কর মৈত্রী , সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান, ছড়াকার লোকমান আহমদ আপন, আবৃত্তি শিল্পী মোঃ গোলাম মোর্শেদ, আবৃত্তিশিল্পী সাইফুল ইসলাম , সংগীতশিল্পী কুমকুম সাইদা, সাংবাদিক অয়ন শাহপরান , বদরুজ্জামান জামান, আশরাফুজ্জামান চয়ন, অভিনেতা শোয়েব আহমেদ, জলি রায় প্রমূখ।
ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। একুশের কবিতা, স্বরচিত একুশের কবিতা, ছড়া, কথা আর একুশের গানে গানে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে উঠলেও আলোচনায় উঠে এসেছে মাতৃভাষা বাংলা চর্চার প্রতিবন্ধকতা ও শঙ্কার কথা।
আজ একুশের এই আড্ডায় আমরা যখন বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলছি তখন বাংলা ভাষা বর্তমানে বিরাট একটা চাপের মধ্যে রয়েছে। আর চাপ শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নয় । দেশের মধ্যে এর চর্চা এবং এর ব্যবহার ব্যাপক চাপে আছে । মূলত এ চাপ তিন ভাবে রয়েছে। প্রথমত দেশের ভিতরে অন্যান্য ভাষার আগ্রাসন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবার কিংবা প্রতিটি পরিবার চায় তাদের সন্তানদের ইংরেজিতে পারদর্শী করতে এইযে ইংরেজির প্রতি প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যার কারণে পারিবারিকভাবে বাংলা ভাষার চর্চা কমে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়তঃ বাংলা ভাষার ভিতর অন্য ভাষা ঢুকে যাচ্ছে। বিশেষ করে হিন্দি কিংবা ইংরেজির অনুপ্রবেশ। হিন্দি চ্যানেলগুলোর কুপ্রভাব।
তৃতীয়ত হচ্ছে মিশ্র শব্দে উচ্চারণ কিংবা বিকৃত উচ্চারণ যেমন বাংলা ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার স্টাইলে বাংলা উচ্চারণ বিশেষ করে বিদেশে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের মধ্যে সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে।
তারা বলেন এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের যথেষ্ট পঠন পাঠন প্রয়োজন । বিদেশি ভাষার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ গুলো বাংলায় অনুবাদ প্রয়োজন। যদি আমাদের চর্চা না হয়ে থাকে তাহলে আমাদের ভাষা বেশ সমস্যায় পড়ে যাবে।
একসময় পূর্ণেন্দু পত্রী বলতেন -” পশ্চিমবাংলার বাঙ্গালীদের বাংলাদেশের যেতে হবে বাংলা শেখার জন্য” এখন হয়তো আমরা সে গল্পটা করতে পারি যে, আমরা আমাদের ভাষাটা টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করছি, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কতটুকু থাকবে সেটা কিন্তু চিন্তার বিষয়। সুতরাং বাংলা সম্পর্কে আমাদের যতটা আবেগ অহংকার আছে ব্যবহারিক জীবনে তার ততটা প্রয়োগ থাকতে হবে।
ফেব্রুয়ারি এলে ভাষার জন্য আমরা দরদ দেখাই কবিতা গান বক্তৃতায়। অথচ সারা বৎসর আমরা অপসংস্কৃতিতে কিংবা বিদেশী ভাষার সংস্কৃতিতে মগ্ন থাকি।
ফ্রান্সে বেড়ে ওঠা আমাদের এই প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করার জন্য ফ্রান্সের মূল ধারার স্কুলগুলোতে বাংলা ভাষা চালুর দাবি উত্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সকলেই একমত পোষণ করেন এবং এই দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় করণীয় কিংবা পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। এদেশের মূল ধারার স্কুলগুলোতে আরবি চাইনিজ স্পেনিশ ইতালিয়ানসহ বিভিন্ন ভাষা চালু রয়েছে। আমাদের কমিউনিটি এখন বড়ো হয়েছে, তাই এই ব্যাপারে দাবি উত্থাপন এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
তারা ‘স্রোত’র এই সাহিত্য আসরের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
কবি রবিশঙ্কর মৈত্রী স্বরচিত একুশের কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে আসরের ইতি টানেন।