চাই সুপেয় পানি

আখতার-উজ-জামান     সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। আর এ দেশে পানযোগ্য পানির প্রধান উৎস নদী-খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর ও জলাশয়। এক সময় আমাদের দেশে ১ হাজারের বেশি নদী থাকলেও সেগুলোর বেশিরভাগই এখন মরে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ হিসাবে বর্তমানে দেশে নদীর সংখ্যা ৩১০ এ নেমে এসেছে। পানির ওপর নাম জীবন। কথাটি চিরাচরিত হলেও সুপেয় পানি সংকট ক্রমেই চরম আকার ধারণ করেছে। অথচ সুপেয় পানির জন্য এক সময় আমাদের দেশের নদী-নালা আর খাল-বিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে ব্যবহার হতো।

বিশ্ব পানি দিবস আজ। ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ সভা ২২ মার্চ তারিখটিকে  বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পানি ও কর্মসংস্থান’ । ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের -ইউএনসিইডি এজেন্ডা ২১-এ প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয় এবং তার পর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

একটি জরিপে দেখা যায় যে, গত দশকে পানির ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হওয়া সত্বেও বিশ্বে ৭৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। ২৪৮ কোটি মানুষ সঠিক পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার আওতায় নেই বললেই চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ লোকের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৭ দশমিক ৫ লিটার পানি। মৌলিক চাহিদা ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চাহিদা ও বিশুদ্ধ খাদ্য পানীয়ের জন্য প্রতিজনে ২০ লিটারের মতো পানি প্রয়োজন হতে পারে।

পৃথিবীর শতকরা ৭১% পানি হিসেবে থাকলেও এর মাত্র ৩% খাবার যোগ্য যার বিরাট অংশই এন্টার্কটিকা ও গ্রীনল্যান্ডে বরফ হিসেবে জমা আছে অথবা মাটির নীচে। হিসেব করলে দেখা যায় যে, পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ০.০১ শতাংশ মানুষের ব্যবহারোপযোগী। তাও আবার পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। আধুনিক বিশ্বে যখন বিজ্ঞানের জয় জয়কার সেখানে প্রায় ১৫০ কোটিরও বেশী মানুষের জন্য নাই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, আর প্রতি বছর শুধু পানি বাহিত রোগে ভুগে মারা যাচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ।

পানি আমাদের ন্যায্য অধিকার। সকলের জন্য পানি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। পানি সঙ্কট মোকাবিলা ও পানির যোগান নিশ্চিত করতে সকল প্রকার পানির উৎস নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের দূষণ প্রতিরোধ ও ভরাট বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। ভরাট ও দূষণের কারণে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নির্ভরতা বেড়েছে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর।

বর্তমানে দেশের ৯৮ ভাগ খাবার ও শুকনো মৌসুমে সেচ কাজে ৮০ ভাগ পানি ভূ-গর্ভস্থ থেকে সরবরাহ করা হয়। অনিয়ন্ত্রিত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন প্রকৃতি দূর্যোগ বয়ে আনবে। পানির উৎসসমূহ সংরক্ষণ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সেগুলির যথাযথ ব্যবহারই ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার হ্রাস করতে পারে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর উৎসগুলো ভরাট ও দূষণমুক্ত করে সংরক্ষণ করা অত্যান্ত জরুরী। জারে ভর্তি মিনারেল ওয়াটারের নামে খাওয়ানো হচ্ছে দূষিত পানি।

রাজধানী ঢাকা ও তার আশে পাশে বৈধ ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা প্রায় তিনশত কারখানায়ই উৎপাদন হচ্ছে দূষিত খাবার পানি। দু-একটি বাদে অধিকাংশ মিনারেল ওয়াটারের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে অপরিচ্ছন্ন স্থানে। রাজধানীর অনেক এলাকাতেই বর্তমানে পানির সংকট চলছে। অনেক এলাকায় পানি পাওয়া গেলেও তাতে দূর্গন্ধ ও ময়লা। সরাসরি ওয়াসার সাপ্লাই পানি পান করলে পেটের পীড়াসহ নানা অসুখ-বিসুখে ভুগতে হয়। আর এসবক কারণেই সামর্থ্যবান মানুষ এখন বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য বেসরকারী খাতের মিনারেল ওয়াটারের ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর সকল প্রাণেরই উৎস পানি এবং সকলেই পানির ওপর নির্ভরশীল।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts