ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ বিতরণ কাজে যে কোন অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি ত্রাণ সরররাহের কাজে যোগ দেয়া এমন কিছু লোক রয়েছে যাদের এটাই যেন প্রফেশন হয়ে যায় এবং ত্রাণ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে রকম যেন না হয় বরং ত্রাণ যাতে সকলের কাছে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থাই আমরা নিতে যাচ্ছি এবং নিব।’

শেখ হাসিনা বলেন, এই রিলিফ দিতে কোন সমস্যা হলেই তিনি সাথে সাথেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বেশি জায়গায় নয় দেশে সাড়ে ৪ হাজারের মত ইউনিয়ন হলেও পাঁচ-সাতটি জায়গায় এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘রিলিফ দুর্নীতির সঙ্গে যেই জড়িত আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নেব। কারণ গরিবদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্যের কেউ অপব্যবহার করবে এটা আমরা কখনোই বরদাশত করবোনা। সে আমার দলেই হোক বা অন্য দলেরই হোক, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বুধবার তাঁর ত্রাণ ও তহবিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং ব্যক্তি বিশেষের অনুদান গ্রহণকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ভাষণ প্রদান দেন। তাঁর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস পিএমও তে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জনগণ ও দেশের অর্থনীতিকে করোনাভাইরাস মহামারী সৃষ্ট সংকট থেকে বাঁচাতেই প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যেই প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার আমরা ঘোষণা দিয়েছি। এটা শুধু আজকের জন্য নয়, আমাদের এখনকার যে সমস্যা সেটা সমাধান করা এবং আগামী ৩ অর্থবছর পর্যন্ত যে পরিকল্পনা সেটা বাস্তবায়ন করা। যাতে এই করোনাভাইরাসের সময়টা পার করে আপনারা আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু আবার চালাতে পারেন। যেটা সব শ্রেণীর মানুষ পাবে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এবং সেই সুযোগটা সৃষ্টির জন্যই আমরা ৩ বছর মেয়াদি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছি। আশাকরি এই অবস্থার আমরা উত্তোরণ ঘটাতে পারবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের একেবারে নিন্ম আয়ের মানুষ- আমাদের দিন মজুর শ্রেণী কামার-কুমার, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানদারগণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-প্রত্যেকের কথাই আমরা চিন্তা করেছি এবং প্রত্যেকের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই প্রণোদণার ঘোষণা দিয়েছি। সব শিল্প- কলকারখানা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতে চালু থাকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জিডিপি’র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এই প্রণোদণার খাতে আমরা ব্যয় করবো বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, আজকের যে অর্থনৈতিক মন্দা সেটা বিশ্বব্যাপীই দেখা দেবে, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেজন্য বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করার জন্যই আমরা খাদ্য উৎপাদনে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষা করতে হবে। এজন্যই বাইরের লোকের সঙ্গে না মেশা, জনসমাগম যেখানে সেখানে না যাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যকেও সুরক্ষিত করতে হবে। সেই দায়িত্ব সকলকে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘যদিও খেটে খাওয়া দিন-মজুর শ্রেনীর এবং ছোট ব্যবসায়ীদের কষ্ট হচ্ছে,তাঁদের জন্য সময়টা খুব দু:সময়, সেটা আমি বুঝতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করেই আমরা আমাদের লক্ষ্য, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে আমর অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলাম। যার সুফলও মানুষ পেতে শুরু করেছিল।

এই করোনাভাইরাস আসার পরই অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা কিছুটা শ্লথ হয়ে গিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপীই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সমগ্র বিশ্বই বলতে গেলে স্থবির হয়ে পড়েছে।’

তিনি ত্রাণ সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা যে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তা মানুষের কল্যাণের কাজে লাগবে। সেজন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এদিন যারা অনুদান প্রদান করেন তাঁরা হচ্ছেন-

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড (ডিএমটিসিএল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কাশেম ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশন, বিসিএস কর এসোসিয়েশন, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) ঢাকা ক্লাব, বিএসআরএম গ্রুপ, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, উত্তরা গ্রুপ, টেক্সকোটেক, হামদর্দ ফাউন্ডেশন, গান বাংলা,শাওমি টেকনোলজি বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্পাহানী টি লিমিটেড, সিদ্ধেশ্বরী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন, ওলিয়া গ্যাস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি), ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন (ইইডি), চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স এবং বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি। একইসঙ্গে জিল্লুল হাকিম এমপি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করেন।

Print Friendly

Related Posts