বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দিনমজুর ও মেহেনতি শ্রেণীর মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য আরো ৫০ লাখ দরিদ্র লোককে ১০ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহের জন্য রেশন কার্ড সুবিধার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ৫০ লাখ চরম দরিদ্র ও দুস্থ মানুষ সরকারের রেশন কার্ড সুবিধার আওতায় প্রতি কেজি ১০ টাকায় চাল পাচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আরও ৫০ লাখ লোককে এই সুবিধার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’
শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিভাগের বিভাগের নয়টি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
যারা হাত পেতে খেতে পারবেনা তাদের জন্যই তাঁর সরকার ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে ৫০ লাখ রেশন কার্ড আরো অতিরিক্ত দেব সেখানে যারা সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছেন এবং যাদের ইতোমধ্যেই রেশন কার্ড রয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে যাদের সত্যিকার প্রয়োজন তাঁদের নামটা যেন তালিকায় থাকে।’
ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীদের প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে কমিটি করতে বলেছেন যাতে যারা সত্যিকার দুস্থ এবং যাঁদের ঘরে খাবার নেই তাঁদের খুঁজে বেরা করা যায়,বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের প্রকৃত প্রয়োজন তাদের কাছে সাহায্য যেন পৌঁছায় সেজন্য ইতোমধ্যেই আমরা নির্দেশ দিয়েছি। সরকারী বা বেসরকারীভাবে যে সহায়তা দেব সেটা যেন সঠিক লোকের কাছেই পৌঁছায়। সেখানে যেন কেউ অনিয়ম করতে না পারে। সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশ্ব মন্দা এমনকি দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশংকা ব্যক্ত করায় দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য তার সরকার ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরী করেছে।
সরকার প্রধান বলেন, এই প্যাকেজ শুধু আজকের জন্যই নয়, উপরন্তু আগামী তিন বছর কিভাবে এই মন্দার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই করা হয়েছে।
তিনি এসময় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে পুণরায় গুরুত্বারোপ করে কোথাও এক টুকরো জমিও যেন পতিত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘরের পাশের এক চিলতে জায়গা থাকলে সেটাকেও কাজে লাগানোর আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি খানিক বাদে বাদে গরম পানি খাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন,‘ফ্লাস্কে গরম পানি রেখে খানিক বাদে বাদে পান করতে থাকলে গলাটা পরিস্কার থাকবে। তাহলে এই ভাইরাসটা আর ক্ষতি করতে পারবে না। সেই সাথে মওসুমী যে ফলগুলো রয়েছে সেগুলো খেয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।’
যারা বাইরে থেকে আসছে তাদের দ্বারাই এই ভাইরাসটা নতুন নতুন জায়গায় সংক্রমিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী লকডাউন কঠোরভাবে অনুসরণের এবং কোন জেলায় নতুন করে কেউ প্রবেশ করতে গেলে তাকে বাধা প্রদান করে সেখানেই লকডাউনের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, যেখানে ন্যূনতম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে সেখানে যাওয়া যাবেনা। কারণ, অনেক জায়গায় আমরা দেখেছি অবস্থা ভাল ছিল কিন্তু অন্য জায়গার থেকে লোকজন আসার ফলে সংক্রমন হয়েছে।
সৌদি আরবে পর্যন্ত মসজিদে জামাত বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনকি তারাবির নামাজও সেখানে ঘরে বসে সবাই পড়বে। মন্দির,মসজিদ,গীর্জা এমনকি ভ্যাটিক্যান সিটিতে পর্যন্ত এ ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা আসন্ন মাহে রমজানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত আপনি সব জায়গায় বসে করতে পারবেন। আপনারা ইসলামী ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মেনে ঘরে বসেই তারাবির নামাজ পড়বেন। আর আল্লাহকে ডাকতে হবে। সেটা আপনি আপনার মত করে যত ডাকতে পারবেন, মহান রাব্বুল আলামিন সেটাই কবুল করবেন।’
তিনি বলেন, ‘মসজিদে গিয়ে নিজেকে সংক্রমিত করবেন না বা অন্যের সংক্রমনের কারণ হবেন না। সামনে রোজা। সে সময় পণ্য পরিবহন এবং খাদ্য সামগ্রীর যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা পর্যান্ত ব্যবস্থা নিয়েছি।’