বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন জনগণকে ঈদুল ফিতরের আগেই নগদ আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে যাদের আয়-উপার্জনের পথ নাই তাদের কিছু নগদ আর্থিক সহায়তা আমরা ঈদের আগেই দিতে চাই, যাতে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার জেলাপ্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়ে একথা বলেন।
ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর এবং গাইবান্ধা জেলা।
প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক ঋণের সুদের টাকা দুই মাসের জন্য স্থগিত করার এবং সরকারি ছুটি আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করারও ঘোষণা দেন।
ঈদকে সামনে রেখে এবং পবিত্র রমজান উপলক্ষে সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকা দোকান-পাট সীমিত আকারে চালু করার অনুমতি দেয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জনগণ ইফতার ও সেহেরি করতে যাতে কোন সমস্যার সম্মুখীন না হয়, সেজন্য সরকার হাটবাজার এবং দোকানপাট খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এতে করে ঈদকে সামনে রেখে জনগণ কেনাকাটা করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি জেলায়, বিভিন্ন জেলাভিত্তিক যেসব ছোটখাট শিল্প রয়েছে, সেগুলো তারা চালাতে পারবেন। সেভাবে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, অর্থনীতির চাকা যাতে গতিশীল থাকে, মানুষকে সুরক্ষিত রেখে ও তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে সেগুলো যেন পরিচালিত হতে পারে, সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বেশকিছু নির্দেশনা আপনারা শিগগিরই পাবেন।
তিনি বলেন, সরকারি অফিস-আদালত সব আমরা চালু করে দিচ্ছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয় এবং সামনে ঈদের আগে মানুষ যাতে কেনাকাটা বা যা যা দরকার সেটা যেন মানুষ করতে পারে।
তাঁর সরকার জনগণের যোগাযোগ এবং ডাক ব্যবস্থা কার্যকর রাখার স্বার্থে ধীরে ধীরে রেল যোগাযোগও চালু করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ছুটির বিষয়ে প্রদানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিলাম। আমরা তা ১৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি।’
তিনি ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ সম্পর্কে বলেন, ‘গত দু’মাস যেহেতু কোন ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল না তাই ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকে সেজন্য ইতোমধ্যে যারা ঋণ নিয়েছেন একেবারে ক্ষুদ্র ঋণ পর্যন্ত, কাজেই এই ঋণের সুদ স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। আপনাদের সঙ্গে কথা বলার পর আমি নিজেই এ নিয়ে আলোচনায় বসবো।’
প্রধানমন্ত্রী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্থাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সকলকে পুনরায় সতর্ক করে বলেন, ‘সকলেই মাস্ক ব্যবহার করবেন। নিজেকে সুরক্ষার এবং আপনার হাঁচি-কাশি থেকে অন্যরাও যাতে সংক্রমিত না হয় সেজন্য।’
তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় আপনারা খেয়াল রাখবেন- খুব বেশি খোলামেলাভাবে মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা ঠিক হবে না। অহেতুক বাড়ির বাইরে যাওয়া, এক জায়গায় জড়ো হওয়া,আড্ডা বা জনসমাগম করা থেকে সবাইকে মুক্ত থাকতে হবে।’
অতীতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করাতে বাংলাদেশ এর থেকে ভাল ফল পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভাইরাসের এখনও কোন ওষুধ বের হয়নি। তাই সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাস কষ্টকেই এই রোগের উপসর্গ ধরা হচ্ছে। সেখানে, বার বার হাত ধোয়া এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং কিছুক্ষণ পর পর গরম পানি পান করতে বলা হচ্ছে।’
ভিডিও কনফারেন্সে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ইমাম, ব্যাংকার, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন সংযুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সহ পিএমও’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী একই বিষয়ে পৃথকভাবে ছয় দফায় ৫৬টি জেলার সঙ্গে পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন।