বাদল সাহা: আজ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৭৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতার যাদবপুরে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতার কালীঘাটে মামা বাড়িতে। বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য। মা সুনীতি দেবী। কবির পিতৃপুরুষের নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রাম। বাবা কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের ব্যবসা করতেন। ব্যবসার সুবাদে কবির পরিবারকে কলকাতায়ই থাকতে হতো।
উনিশ শতকের গোড়াতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এ সময় বিপ্লববাদী ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভেতর থেকে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। ক্ষণজন্মা এ কবি কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতা’র (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্ক্সবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন।
তার রচনাবলীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো : ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি।
দীর্ঘদিন কবির পরিবার কলকাতায় অবস্থান করার কারণে কোটালীপাড়ার তার পূর্ব পুরুষের ভিটাটি বেদখল হয়ে যায়। দীর্ঘকাল ধরে বেদখল থাকার পরে ২০০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কবিদের বাড়ি দখলমুক্ত হয়। এর পর কবির পৈত্রিক ভিটাটি দীর্ঘদিন শূন্য অবস্থায় পড়েছিল।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জেলা পরিষদ কবির পৈত্রিক ভিটায় একটি অডিটরিয়াম ও লাইব্রেরি স্থাপন করেছেন। এখানে কবির স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য প্রতি বছর মার্চ মাসে একটি মেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু কোন বছরই বিশেষ কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয় না। এ ব্যাপারে অনেকেই হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান বুলু বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের কাছে কবি সুকান্তকে তুলে ধরতে হলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জাঁকজমকপূর্ণ কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা উচিৎ। শুধু বাৎসরিক একটি মেলা করে বাঙালি জাতির কাছে কবি সুকান্তকে তুলে ধরা সম্ভব নয়।’
কবি সুকান্ত স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা এ বছর বড় পরিসরে কবি সুকান্তের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে পারবো না। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবো।’