চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসা দ্রুত বন্ধ চাই

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন
গত ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাজধানীর ঝিকাতলায় জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসার নামে মৃত এক শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) তে ভর্তি রেখে প্রতারণার মাধ্যমে টাকার আদায় করা হয়।  অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-২ এর ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে মৃত শিশুকে উদ্ধার করে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের ৬ জনকে আটক করে এবং ১১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. জুনায়েত শফিক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নাঈম আহমেদ সম্প্রতি হাইকোর্টে হাজির হয়ে অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে সময় চেয়েছেন। আদালত সময় দিয়ে এ বিষয়ে ২৭ মার্চ শুনানীর দিন ধার্য করেন।

দুঃখজনক হচ্ছে, অনেক বড় অন্যায় করার পরও অপরাধীর পক্ষে কথা বলার মতো ল ইয়ার পাওয়া যায়। কেউ ভাবেনা তার অপরাধটি কতটা ভয়াবহ রকমের জঘন্য। এসব ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।

বিষয়টি আজ শুধু জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ঘটছে তা নয়, বড় বড় অনেক হাসপাতালে এখন বড় ব্যবসা হচ্ছে  নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) তে লাইফ সাপোর্ট। এই লাইফ সার্পোটের নামে মৃত ব্যক্তিতে বাচিঁয়ে রাখার নামে বড় অংকের টাকা টাকা হাতিয়ে নেয়া। চিকিৎসকদের উপর বিশ্বাস রেখে সাধারণ মানুষ তা মেনে  নিচ্ছে। আর লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার পর দেখা যায় রোগী আর বেঁচে নেই। তার মানে—–।

যেখানে চিকিৎসা সেবাকে সাধারণ জনগনের কাছে পৌছে দেবার লক্ষ্যে মেডিকেল কলেজগুলোতে সরকার কোটি কেটি টাকা ভুর্তকি দিচ্ছে। আর সেই মেডিকেল কলেজগুলো থেকে চিকিৎসকরা পাশ করে চিকিৎসা সেবাকে ব্যবসায় পরিণত করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। চিকিৎসা সেবা আর সেবা থাকছে না। সরকারী হাসপাতালে নিয়োগ পেয়ে সরকারী বেতন ভোগ করে চিকিৎসকরা কাজের ব্যস্ততার কারণে রোগী দেখার সময় পান না। রোগীকে সান্ধ্যকালীন চেম্বারে আসার পরামর্শ দেন।

আর আজ বাংলাদেশের প্রফেসরদের রোগী দেখানের ভিজিট এখন ১০০০-১২০০ টাকা। আবার রোগী দেখানের পর প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে প্যাথলজি টেষ্ট তো আছেই। টেষ্ট আবার যে কোন স্থানে করালে হবেনা। চিকিৎসকের নির্দেশ দেয়া প্যাথলজিতে টেষ্ট করাতে হবে। তারপর টেষ্টের রিপোর্ট দেখানোর ভিজিট আবার ৫০০-৭০০ টাকা। যার কোন নিয়ম কানুন নেই। চিকিৎসক তার ইচ্ছামত এই ভিজিটের ফি ধার্য করে থাকে।

আবার বড় বড় অধ্যাপককে এখন রোগী দেখানো খুবই কষ্টকর ব্যাপার। তাঁর সিরিয়াল দিতে হলে একমাস বা দুইমাস অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় সিরিয়াল দিতে উপরিও দিতে হয়। অনেক কষ্ট করে সিরিয়াল দেয়ার পর অনেক রোগী ডাক্তার দেখানোর পূর্বে মারাও যায়। কিন্তু ডাক্তারের কি আসে যায়। আবার টেষ্টের রিপোর্ট এ ডাক্তার সন্তুষ্ট না হলে অন্য প্যাথলজিতে টেষ্ট করাতে হয়। রোগ তো নির্ণয় করতে হবে, তারপর ঔষধ লেখা।

আমাদের দেশের দাদী নানীরা বলতেন নর্মাল ডেলিভারির মাধ্যমে যে সকল শিশু জন্ম নেয় তা বেশির ভাগ সুস্থ্য থাকে। আর বর্তমানে আমাদের দেশে শিশুর স্বাভাবিক গর্ভপাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আছে কতিপয় গাইনি ও অব চিকিৎসকরা। যারা শিশুর স্বাভাবিক গর্ভপাতের ঘোরতর বিরোধী। তারা অধিক টাকা পাওয়ার লোভে শিশুর স্বাভাবিক গর্ভপাতের সময় আসলে গর্ভধারিনী মাকে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ঔষধ খাইয়ে শিশুর ওজন বৃদ্ধি করে এবং শিশু মায়ের গর্ভে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করে বিভিন্ন টেষ্ট করিয়ে রোগীর অভিভাবককে বলেন, তাকে দ্রুত সিজার করার প্রয়োজন। এই ভয় দেখিয়েই সিজার করতে বাধ্য করে। কারণ একটি শিশুর স্বাভাবিক ডেলিভারি হলে ডাক্তার পাবে ৫-১০ হাজার টাকা, আর সিজার হলে ৩০-৫০ হাজার টাকা।

এই সব নোংরামী ব্যবসা বন্ধের জন্য প্রতিটি হাসপাতালে সরকারের একটি মনিটোরিং বা অডিট টিম নিয়োগ দেয়া উচিত। অডিট টিম সাপ্তাহিক বা মাসিক রিপোর্ট দাখিল করবে যা প্রত্রিকায় প্রকাশ হবে। প্রতিটি চিকিৎসকের সান্ধ্যকালীন রোগী দেখার ভিজিট পদ-মর্যাদা ক্রমে সরকারীভাবে নির্ধারণ করে দেয়া উচিৎ। যাতে ভিজিট সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে।  আর অভিযুক্ত কিনিক বা হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের কঠোর আইনের আওতায় আনা উচিত।
মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন : একজন ফ্রিলেন্স লেখক
soyeb4@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts