সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।

আজ ১৭ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৩৯তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

শেখ হাসিনা দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে ঢাকায় ফিরে তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসার জবাবে এসব কথা বলেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আজকের জনসভায় লাখো লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা, আর ভাইয়েরা এবং আরো অনেক প্রিয়জন।

শেখ হাসিনা বলেন, ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এ সময় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান।

১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

একই বছরের ১৭ মে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে পরদিন দৈনিক ‘সংবাদ’ লিখে- রাজধানী ঢাকা গতকাল (১৭ মে) মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টিও মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। শ্লোগানেও ভাটা পড়েনি। লাখো কণ্ঠের শ্লোগান নগরীকে প্রকম্পিত করেছে।

বিকেল সাড়ে চারটায় আকাশে যখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি দেখা যায় তখন সকল নিয়ন্ত্রণ আর অনুরোধ আবেদন অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিমানটি অবতরণ করে। জনতা একেবারেই বিমানের কাছে চলে যায়।

বহু চেষ্টার পর জনতার স্রোতকে কিছুটা সরিয়ে ট্রাকটি ককপিটের দরজার একেবারে সামনে নেয়া হয়। এই সময়ে শেখ হাসিনা ভেতর থেকে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন।

বেলা ৪টা ৩২ মিনিটে শেখ হাসিনা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ট্রাকে নেমে আসেন। এই সময় লাখো জনতার কণ্ঠে ছিল গগন বিদারী শ্লোগান- ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম- মুজিব হত্যার বদলা নেব।’ এ সময় অনেকের চোখে ছিল অশ্রুধারা। আবদুর রাজ্জাক যখন মালা পরিয়ে দেন তাঁকে, তখন শেখ হাসিনাও অঝোর ধারায় কান্না করছিলেন।
এ সময় শেখ হাসিনার পরনে ছিলো সাদা রঙের ওপর কালো ডোরাকাটা তাঁতের মোটা শাড়ী ও মাথা ঘোমটায় ঢাকা।

কুর্মিটোলা থেকে শেখ হাসিনার শেরেবাংলা নগরে এসে পৌঁছতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। এ সময় ঝড় বৃষ্টিতে নগর জীবন প্রায় বিপণ্ন। রাস্তাঘাট স্বাভাবিক জীবন যখন ব্যাহত তখন এখানে অপেক্ষা করে কয়েক লাখ মানুষ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তিনি গণসংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত হন।

Print Friendly

Related Posts