মৃত ২২, ফ্লাইওভার পড়ার সেই মুহুর্তের ভিডিও

বিডি মেট্রোনিউজ ডেস্ক ভারতের কলকাতায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২। ধারণা করা হচ্ছে আরো দেড় শতাধিক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একটা করে লোহার বিম সরছে রাস্তা থেকে। আর মৃত্যুর বীভৎস ছবি হাহাকার ছড়িয়ে দিচ্ছে গোটা এলাকায়। রাস্তার অ্যাসফল্টের সঙ্গে মিশে গিয়েছে একটা গোটা ট্যাক্সি। তার মধ্যে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে পিষে যাওয়া, মাংসপিণ্ডে পরিণত হওয়া দেহ। একটা নয়। অন্তত চারটে ট্যাক্সি পিষে গিয়েছে ভেঙে পড়া উড়ালপুলের তলায়। চাপা পড়েছে একটি যাত্রী ভর্তি মিনিবাস, একটি স্কুল বাস, একটি ট্রাক। শুধু যানবাহন নয়, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ গণেশ টকিজ মোড়ে যে পথচারীরা ছিলেন, তাঁরাও চাপা পড়েছেন। অনেকেই চিরতরে। আর উঠবেন না কখনও!

নির্মীয়মান বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার গণেশ টকিজ মোড়ে বৃহস্পতিবার ভেঙে পড়ার পরই ব্যাপক পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান আশপাশের সব ক’টি থানার পুলিশ অফিসার। পৌঁছন লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারাও। কিন্তু, পুলিশ গিয়ে সে ভাবে উদ্ধারকাজ শুরু করতে পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু মানুষকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন। তার মধ্যেই ডেকে পাঠানো হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে। কিন্তু বিপর্যয় এতই প্রবল যে সেই বাহিনীও দিশা খুঁজে পায়নি।  যাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, তাঁদের মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দ্রুত। মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

ফ্লাইওভারের ভেঙে পড়া চাঙড় এবং স্টিলের কাঠামোর নীচে অনেকই অর্ধেক চাপা পড়ে ছিলেন। কারও মাথা বেরিয়েছিল বাইরে, কারও পা। কিন্তু, তাঁদের উদ্ধার করা যায়নি তাঁদের। প্রচণ্ড ভারী বিমের তলায় যে ভাবে তাঁরা চাপা পড়ে ছিলেন, তাতে বিম না সরিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আর্তনাদ করতে করতে চোখের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন অনেককে। অসহায় ভাবে শুধু দেখতে হয়েছে। চেষ্টা করেও বার করে আনা যায়নি।

বেলা ৩টে নাগাদ পৌঁছয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল বা এনডিআরএফ। পৌঁছয় সেনা এবং আধাসেনাও। তার পরই গতি পায় উদ্ধারকাজ। যে সব গাড়ির অংশ বিশেষ চাপা পড়েছিল ভেঙে আসা বিমের নীচে। ব্রেক ডাউন ভ্যান দিয়ে সেগুলি টেনে বার করা হয়। সেগুলির মধ্যেও বেশ কয়েকটি থেকে উদ্ধার হয় মৃতদেহ।

অন্য দিকে একই সঙ্গে বড় ক্রেন এনে শুরু হয় রবীন্দ্র সরণি আর বিবেকানন্দ রোডের ঠিক ক্রসিংয়ে ভেঙে পড়া বিশাল বিশাল স্টিল বিম। লোহার ওই সব কাঠামো এত বড় ছিল যে তা ক্রেন দিয়ে তোলাও সম্ভব ছিল না। গ্যাস কাটার দিয়ে প্রত্যেকটি বিমকে কেটে টুকরো টুকরো করতে শুরু করে এনডিআরএফ। তার পর ক্রেন দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সেগুলিকে। একটি করে বিম সরেছে, আর লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছে মৃতের সংখ্যা। রাস্তার উপর হলুদ চাদরের মতো বিছিয়ে থাকা পিষে যাওয়া ট্যাক্সি থেকে মৃতদেহ বার করতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। গ্যাস কাটার দিয়ে ট্যাক্সি কেটে বার করতে হয়েছে পিষে যাওয়া যাত্রীদের।

সিআরপিএফ-এর তরফে জানানো হয়, উদ্ধারকাজ শেষ করতে সারা রাত লাগবে। কিন্তু রাত সওয়া ৯টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, উদ্ধারকাজ শেষ। তিনি জানান, আর তিনটে দেহ ধ্বংসস্তূপের নীচে রয়েছে। এনডিআরএফ সময় নিয়ে সেগুলি উদ্ধার করবে।

ধ্বংসস্তূপের অর্ধেকটাই যখন সরানো বাকি, তখন মুখ্যমন্ত্রী আগে থেকেই কী করে বলে দিলেন, উদ্ধার কাজ শেষ! কী ভাবেই বা তিনি জানলেন, আর মাত্র তিনটে দেহ ধ্বংসস্তূপের নীচে রয়েছে! মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা এ দিন বিস্ময় তৈরি করেছে বি‌ভিন্ন মহলে। যে মিনিবাসটি ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছে, সেটি বার করে আনার কোনও খবর মেলেনি। মিনিবাসের যাত্রীদের কী হল, তা নিয়েই ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।

দেখুন ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার সেই মুহূর্তের ভিডিও:

https://www.youtube.com/watch?v=unJ5wGxWj38

 

Print Friendly

Related Posts