দরজি পাখি
দরজি পাখিকে বোলো তার বাসায় যেন একদিন
অতিথি করে আমাকে। কী নিপুণ দক্ষতায় সে
বেঁধেছে ঘর। অনেকদিন হল ঘরে ফিরিনি
অনেকদিন হল ঝড়ে, নদী চরে ভেঙেছে সংসার।
‘শৃন্বম্তু বিশ্বে অমৃতম্য পুত্রা’
‘হে পৃথিবীর মানব সকল অমৃতের সন্তান
তোমরা শ্রবণ করো’
‘হে পরদেশি মেঘ তুমি যেওনা উড়ে’
আমাকে ভাসাও, আমি ভাসতে জানি না
আমাকে কেউ ভাসতে শেখায়নি, পরজীবীর মত
আমার কোন দেশ নেই। মাটি নেই। নেই সেই
প্রতিমার চালচিত্র, শুধু পড়ে আছে
শিল্পীত খড়, বাঁশ, বিসর্জনের পর মুড়িগঙ্গার ঘাটে
কঙ্কালসার মাছে খাওয়া রাজমুকুট, ভাঙা ইজেল জুড়ে
এখন মাথার মধ্যে কে যেন ডুগডুগি বাজাচ্ছে
আমার কোন দল নেই, তাই দলদাস নই
বড় একা ক্ষ্যাপা বাউল।
কোকিলের মত এই সাকিলের কোন বাসা নেই, ভাষা নেই
শুধু মাতৃভাষা আছে, সোনার পানিতে
প্রতিদিন ধুয়ে মুছে সাফ করি বর্ণমালাকে
কাকের বাসায় ডিম রেখে সেই কবে চলে গেছে
আমার চৌদ্দ পুরুষ। জাতক বাউলের মত বাউন্ডুলের
যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, ছেঁড়া একতারার তার
তা ফেলে এসেছি কবে, নীরবে পাখির মত
দেশ ছেড়েছি সময়ের ডালে বাদুড়ের মত ঝুলে আছি আজীবন
বলা ভাল এই পৃথিবীর আমি কোন হরিদাস!
দরজি পাখিকে বোলো,
সে যেন আমাকে শেখায় বেঁচে বর্তে থাকার রসায়ন।
কী নিপুণ দক্ষতায় সে বানিয়েছে ঘর।
আমার অনেক কিছু নেই, নেই সে দেখার চোখ, ইন্দ্রলোক
থাকার মধ্যে আমার কলম আছে, কলম
এই দুর্ভিক্ষের দেশে আমি কলম বেচতে পারিনি।