মেট্রো নিউজ : হ্যালোইন উৎসব প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে ৩১ অক্টোবর পালিত হয়। অবশ্য হ্যালোইন উৎসব এখন শুধু ইউরোপ কিংবা আমেরিকাতে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। এখন এই হ্যালোইন উৎসব পালন করা হয় আমাদের বাংলাদেশেও। থার্টি ফার্স্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইনস ডে, ফাদার্স ডে কিংবা মাদার্স ডে এর মতো হ্যালোইন উৎসবও হালের নতুন উৎসবে পরিণত হয়েছে। গুলশান ও ধানমন্ডির অভিজাত পাড়াগুলোতে এই হ্যালোইন উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশ জমজমাট আয়োজন হয়ে থাকে।
এটি শুরুতে ভিন্ন উদ্দেশ্যে চালু হলেও বর্তমানে এটি ভিন্ন রূপ নিয়েছে। হ্যালোইন উৎসবের চেয়ে এখন অনেক বেশি ব্যবসায়িক কিংবা বাণিজ্যিক। বড়দিনের পর সবচেয়ে বেশি আয় হয় এই ‘হ্যালোইন উৎসব’ থেকে। যেটাকে ঘিরে ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতি বছর শত শত বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়ে থাকে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এই উৎসব উদযাপনের দিক দিয়ে। অভিজাত পাড়াগুলোতে এটা এখন হালের উৎসবে পরিণত হয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হ্যালোইন উৎসবের একাল-সেকাল।
আজ থেকে ২ হাজার বছর আগে শুরু হয়েছিল হ্যালোইন। উৎসবটি পালিত হত মূলত নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে। সে উপলক্ষে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতেই হ্যালোইন পালন করা হত। হ্যালোইনের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল সেই প্রাচীন রোমান সভ্যতায়। রোমে নতুন ফসল ঘরে তোলার উৎসবের নাম ছিল ‘সাউইন’। সেল্টিকরা ২ হাজার বছর পূর্বে বর্তমানের আয়ারল্যান্ডের এই অঞ্চলে বাস করত। তারা বিশ্বাস করত বছরের শেষ দিনটিতে পৃথিবী ও মৃত ব্যক্তিদের জগৎ এক হয়ে যায়। তখন মৃত ব্যক্তি ও তাদের আত্মারা পৃথিবীতে ফিরে আসে। তারা যাতে ফসলের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য মৃত ব্যক্তির আত্মাদের খুশি করতে সাউইন উৎসব পালন করত। তারা সবাই একসঙ্গে হয়ে আগুন জ্বালিয়ে, পশুবলি দিয়ে, শস্য দিয়ে মৃত ব্যক্তির আত্মাদের সন্তুষ্ট করতে চাইত। এ সময় সেল্টিকরা পশুর মাথা ও চামড়া পড়ত এবং একে অন্যের ভাগ্যগণনা করত।
প্রথমদিকে হ্যালোইন শুধু ইংল্যান্ড ও এর উপনিবেশ দেশগুলোতে পালিত হত। কারণ এটা ছিল প্রোটেস্ট্যান্টদের করা নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে পালিত উৎসব। ম্যারিল্যান্ড ও দক্ষিণাঞ্চলের উপনিবেশগুলোতে হ্যালোইন বেশ জনিপ্রয় ছিল। ইউরোপিয়ানদের চেয়ে আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের পোশাক-আষাক ও রীতিতে ভিন্নতা থাকায় এক সময় হ্যালোইন উৎসবের আমেরিকান ভার্সন চালু হয়। প্রথমদিকে তারা ফসল কাটার মৌসুমে প্লে-পার্টির আয়োজন করত। সেখানে মৃতদের গল্প বলা হত, ভাগ্যগণনা করা হত, নাচ-গানের মাধ্যমে উদযাপন করা হত। এ সময় ভূতের গল্প বলারও একটা প্রচলন ছিল। ঊনিশ শতকে বার্ষিক উৎসব আমেরিকাতে কমন ছিল। কিন্তু তখন সমগ্র আমেরিকাতে হ্যালোইন উৎসব পালন করা হত না।
ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে আমেরিকায় প্রচুর ভিনদেশি লোক আসতে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল আইরিশরা। ১৮৪৬ সালের দিকে তারা আমেরিকায় হ্যালোইন উৎসবকে বেশ জনপ্রিয় করে তোলে। আইরিশ ও ইংলিশদের ঐতিহ্য থেকে আলাদা কস্টিউম ও ধারায় হ্যালোইন পালন করতে শুরু করে আমেরিকানরা। এই দিনে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার, উপহার ও টাকা চাওয়ার রেওয়াজ চালু করে। সেটাই বর্তমানে ‘ট্রিক অর ট্রিট’ ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। আস্তে আস্তে হ্যালোইন সব বয়সীদের উৎসবে পরিণত হয়।
১৯২০ সালের পর থেকে হ্যালোইন ধর্মনিরপেক্ষ ও কমিউনিটি নির্ভর উৎসবে পরিণত হয়। তখন তারা নেচে-গেয়ে, পার্টি করে ছুটির দিনটি পালন করত। এক সময় হ্যালোইনের দিনে রাস্তায় ব্যাপক ভাংচুর করা হত। আর সেই ভাংচুর ঠেকাতে ১৯৫০ সালে শহরের কর্তারা হ্যালোইন উৎসবকে নির্দিষ্ট করে দেয়। সেই থেকে হ্যালোইন উৎসব ঘরের মধ্যে কিংবা ক্লাসরুমে পালন করা হত। আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে হতে নতুন এক হ্যালোইন উৎসব চালু হয়েছে। যেটার পেছনে শুধু আমেরিকানরাই খরচ করে ৬ বিলিয়ন ডলার। যেটা বর্তমানে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ছুটির দিন।
যুক্তরাজ্যের প্রাচীন অধিবাসীরা (ব্রিটেন-আইরিশ-ওয়েলশরা) বিশ্বাস করত, বছরের শেষ দিন জগতের সব নিয়মকানুন স্থগিত হয়ে যায়। আর তখন মৃত্যুর দেবতা সব মৃত আত্মাদের অনুমতি দেয় জীবিতদের জগতে আসার। তখন বছরের শেষ দিন ছিল ৩১ অক্টোবর। আর ওদের মৃত্যুর দেবতার নাম ছিল ‘সাউইন’।
আবার স্কটিশ ও আইরিশদের আরেকটি বিশ্বাস ছিল এ রকম- মৃতরা ছোট ছোট পাহাড়ে পরিদের সঙ্গে থাকে। আর বছর শেষের রাতে (৩১ অক্টোবর) তারা জীবিতদের জগতে আসে নতুন দেহ নেওয়ার জন্য। কাজেই, এই মৃত আত্মাদের হাত থেকে বাঁচতেই হবে। কাজেই, তারাও এক রকম উৎসব পালন করত।
হ্যালোইনের প্রস্তুতির অপরিহার্য অংশ হলো মিষ্টি কুমড়া। ছুরি দিয়ে কুমড়ার গায়ে চোখ ছোট গর্ত করে, ভেতরে বাতি জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় প্রতীকী দৈত্য, জ্যাক ও ল্যান্টার্ন। এ ছাড়া নানারকম মুখোশ, বিভিন্ন ভৌতিক চরিত্রের পোশাক। এ বছর বিক্রিত সেরা দশটি হ্যালোইন পোশাকের মধ্যে রয়েছে হার্লি কুইন, স্টার ওয়ার্স, সুপারহিরো, পাইরেট, ব্যাটম্যান, মিনি মাউস, উইটচ, মিনিওনস, জোকার এবং ওন্ডার উইমেন।