বৈশাখ মিশে আছে বাঙালির হৃদয়ে-অন্তরে

Lion Gani Miah Babul

লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল   পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ, চৈত্রের শেষ বৈশাখের শুরু। এই শেষ চৈত্র আর পহেলা বৈশাখ নিয়ে যে উৎসব আয়োজন, তা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি। বাঙালির নতুন বছরের প্রথম দিন।

মোঘল সম্রাট আকবর তার শাসনামলে ফসলের খাজনা তোলার সুবিধার্থে বাংলা বছরের হিসাব শুরু করেন। সেই থেকে বাংলা নববর্ষ বরণ শুরু হয়। পহেলা বৈশাখ ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে সকল সম্প্রদায়ের এক মিলনের স্মারক। সময় পরিক্রমায় নববর্ষ আজ পরিণত হয়েছে বাঙালির জীবনের সার্বজনীন সবচেয়ে বড় উৎসবে।

পহেলা বৈশাখ প্রকৃতির নিয়মে ঘুরে আসে। দেশজ সংস্কৃতি প্রভাব বিস্তার করে একটা সুস্থ ও সচেতন মানস গঠনের দায়িত্ব নেয়। সংস্কৃতির মধ্যে অবগাহন করেই মানুষ নিজের ব্যক্তিত্বের স্পষ্ট একটি রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেন। নিজের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা যে কোন জাতিকে বড় হওয়ার প্রাথমিক দীক্ষা দেয়। বাঙালির জীবনে বাংলা নববর্ষ একটি সচেতন প্রতিফলন। মূলত বাংলা নববর্ষ উদযাপনের মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে।

বাংলা নববর্ষের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। সচেতন জাতির পরিচয় প্রকাশিত হয়, বিচিত্র সংস্কৃতির রূপের মধ্য দিয়ে। বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির সেই পরিচয়বাহী। নববর্ষ মানুষকে সচেতন করে তার সাংস্কৃতিক চেতনার স্পন্দনে। জাতীয় জীবনে বর্ষ বরণের প্রথম দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর অর্থ নতুনকে বরণের সাগ্রহ মনোভাব।

বাঙালি একটি ভাষাভিত্তিক জাতি। যাদের জন্ম বঙ্গে, মাতৃভাষা বাংলা, মূলত তারাই বাঙালি। এই বাঙালির বড় উৎসব বাংলা নববর্ষ। বিগত বছরের দুঃখ, বেদনা, আনন্দ, উৎসবের স্মৃতিচারণ পরিহার করে নতুন বর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। বৈশাখে উৎসবের ঢল নামে। মেলা বসে গ্রামে গ্রামে। নানা ধরনের হাতের তৈরী দ্রব্য ও খাবারের মেলা যেন গ্রামবাংলার মানুষের প্রতিচ্ছবি। তাদের জীবন যেন গ্রামবাংলার মানুষের প্রতিচ্ছবি। তাদের জীবন যেন খন্ড খন্ড হয়ে ধরা পড়ে তাদের হাতের কারু কাজে। মাটির পুতুল, পাটের শিখা, তালপাতার পাখা, সোলার পাখি, বাঁশের বাঁশি, ঝিনুকের ঝাড়, পুঁতিমালা, কত না অদ্ভুত সব জিনিসের সমাবেশ ঘটে সে মেলায়।

চোখে না দেখলে যেন বিশ্বাসই হয় না বাংলার মানুষের জীবন এত সমৃদ্ধশালী। বাংলার মানুষ গরীব হতে পারে, দারিদ্র্যের নিস্পেষণে তারা জর্জরিত হতে পারে কিন্তু এসব দুঃখ কষ্ট তাদের জীবনকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। নববর্ষ বছরটির জন্যে আশার বাণী বহন করে নিয়ে আসে। তাই নববর্ষ আমাদের প্রাণে জাগায় আশার আলো ও উদ্দীপনা।

বাঙালি জীবনে যেমন ছিল পূণ্যাহ অনুষ্ঠান তেমনি হালখাতা অনুষ্ঠান। জমিদারি প্রথা বাতিলের সাথে পূণ্যাহ অনুষ্ঠান বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু হালখাতা অনুষ্ঠান সগৌরবে বিরাজমান। নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে উদযাপিত হয় হালখাতা উৎসব। বিগত বছরের ধার-দেনা শোধের পর্ব শুরু হয় এই দিনে। এর মধ্যে শুধু ব্যবসায়িক লেনদেন নয় হৃদয়ের বিনিময়ও ঘটে। ব্যবসায়িক লেনদেনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য বাড়ে।

আজকাল পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বিশেষ করে নাগরিক জীবনে। শহরে শহরে মুক্তাঙ্গণে কবিতা পাঠ, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি কর্মসূচী পালিত হয়। ঢাকায় রমনার বটমূলে এই অনুষ্ঠান বিশেষ ব্যাপকতা লাভ করেছে। শুধু নাচ-গানই নয়, বাঙালির বহুকালের অভ্যাস, পান্তা ভাত ও ইলিশ ভাজি খাওয়া ওখানে চালু আছে বহু বছর থেকে।

 

লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts