আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল: কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়। ভাস্কর্যের একটা নান্দনিক দিক রয়েছে, এটি একটি শিল্প। মহামানব, অনেক বড় মাপের মানুষ, দেশ ও জাতির জন্য যারা অনেক অবদান রেখেছেন তাদরকে স্মরণে রাখার জন্য এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে করে তাঁর আদর্শ ও চেতনাকে এ দেশের ভবিষ্যত বা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যায়, জাগরূক রাখা যায়। তাই ভাষ্কর্য মূতি নয়। মূতি হলো যেখানে মানুষ গিয়ে পূজা দেয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যে কেউ ফুল কিংবা পূর্জা দিতে আসে না এবং পূর্জাও হয় না। ভাস্কর্য হচ্ছে স্মৃতিচিহ্ন বা স্মারক। এর মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হবে এবং মানবপ্রেমে ও মানবসেবায় ব্রতী হবে।
টাঙ্গাইল পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার আগে সার্কিট হাউজে শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে নয়মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যেভাবে পাকিস্তানী ও তাদের দোসরদের পরাজিত করা হয়েছে তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীদের পরাজিত করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে যেমন ধ্বংস করা যাবে না তেমনি কেউ যদি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বা ভাঙে তাহলে তাদেরকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো মোকাবেলা করে আবার পরাজিত করব। তাদেরকে আবার আমাদের পায়ের নিচে পড়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কুষ্টিয়ায় যারা বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভেঙেছে সংবিধান অনুযায়ী তাদের এই কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এই আইনেই তাদের বিচার হবে। তাদেরকে অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এদের সাথে জোট করে ক্ষমতায় এসেছিল। ভাঙচুরে অবশ্যই তাদের যোগসাজশ আছে। কিন্তু বিচার করতে গেলে প্রমাণ লাগে। প্রমাণসাপেক্ষে অবশ্যই তাদের বিচার হবে। তারা যদি অর্থ দিয়ে থাকে বা অন্যভাবে সহযোগিতা করে থাকে তবে অবশ্যই তাদের বিচার হবে। যারা যারা অপরাধ করেছে তারা কেউই রেহাই পাবে না।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশটিকে শুধু স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে চান নি, তিনি এটিকে বলেছিলেন মুক্তির সংগ্রাম। দেশটিকে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সব দিক দিয়ে স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ন্যায়-সমতার ভিত্তিতে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি দেশিয়-আন্তর্জাতিক ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। তারপর থেকে ২১ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে। যার ধারাবাহিকতা হলো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা ও ভাঙচুর।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, একাত্তরে নয়মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যেভাবে পাকিস্তানী ও দোসরদের পরাজিত করেছি, তারা আমাদের পায়ের নিচে অস্ত্র সমর্পণ করেছে, আজকে যারা মনে করছে এ দেশকে পাকিস্তানের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, তালেবানীয় আফগানিস্তান বানাবে, ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবে তাদেরকে আমরা একাত্তরের মতো আবার পরাজিত করব।
শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে পৌরসভার উদ্যোগে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন- টাঙ্গাইল পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন ।
বক্তব্য রাখেন, টাঙ্গাইল- ৫ আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন এমপি, টাঙ্গাইল- ২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান প্রমুখ।
সভার শুরুতে মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান আনোয়ার উল-আলম শহীদের মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এর আগে সকালে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে টাঙ্গাইল মুক্ত দিবসের কর্মসুচি উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান। পরে একটি শোভাযাত্রা করা হয়।