শেখ নজরুল ‍এর বৈশাখী ঢাক

আমি পান্তা খেয়েই বড়ো হয়েছি

“””””””””””””””””””””””””””””””
আমি পান্তা খেয়েই বড়ো হয়েছি
তাতে অবশ্য ইলিশ ছিলো না কোনোদিন
থাকতো লাবড়ি, কাঁচা লঙ্কা আর টুকরো পেয়াজ
মাঝে-মাঝে পেতাম পুঁটি মাছের কড়কড়ে শরীর
কখনও কখনও থাকতো পাটালি গুড়ের আর্য স্বাদ
তখনও বৈশাখ ছিলো, ঝড় ছিলো, ভাঙচুর ছিলো
তখনও নিশ্চয়ই নববর্ষে নতুন সকাল ছিলো
তখনও নিশ্চয়ই নতুন দিনের জয়গান ছিলো-
আমার মনে নেই, মনে নেই সে দিনের বৈশাখি সাজ?
মনে নেই, মা কখনও পরেছেন কিনা বাসন্তি রঙের শাড়ি!

মনে আছে, চৈত্রের শেষে ছোট্ট কিছু লাল-নীল খাম-
আসতো বাবার কাছে, ওপরে থাকতো লেখা- শুভ হালখাতা
যে কোনো পত্রে সবারই যেমন, থাকে পড়ার আকুলতা
এমন রঙিন খাম পেয়েও বাবাকে দেখতাম খুব চুপচাপ
চিঠির প্রতি অনিহার কারণটা জেনেছি, আরও কিছু পরে
যখন খামের ওপরে-শুভ হালখাতা আর ভেতরে-বাকির হিসাব

aam

মনে আছে, গঞ্জের হাটে মাইকে বাজতো মন নাচানো গান-
পিয়ার কি এতো দড় না কিয়া, দোস্ত দোস্ত না রাহা-
মেরি দোস্তি মেরা পিয়ার, আরও কতো কতো কতো গান…
হালখাতার দিনে দোকানের চারপাশে লাল-হলুদ-সবুজ
কাগজ কেটে-কেটে রশিতে ঝুলিয়ে সাজাতো চমৎকার
ওপরে সামিয়ানা, ভেতরে চেয়ার-টেবিল, তার এক পাশে-
বাকির হিসাব নিয়ে, সফেদ পোশাকে বসতো দোকানদার
মনে আছে, বাবার সঙ্গে সেখানে যেতাম, পুরোটাই লোভে
আমার কি যে দারুণ পছন্দ ছিলো-দই আর রসগোল্লা!

মনে আছে হালখাতা, চোখে ভাসে-দুপুর রোদের ঘুড়ি
কানে বাজে-নাগরদোলার কচ-কচ-কচ-শব্দের ওঠা-নামা
তখনও বৈশাখ ছিলো, তখনও আনন্দ বেদনায়-প্রাণ বয়েছি
আমি পান্তা খেয়েই বড়ো হয়েছি!

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts