শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার : একজন মহানায়কের কথা

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী পলাশীর যুদ্ধ আজও চলছে। পলাশীর যুদ্ধের খলনায়করা আজও উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত প্রতিভাদীপ্ত মহান ব্যক্তিদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা খেলছে। নবাব সিরাজুদ্দৌলা, বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড, বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ড, জাতীয় চার নেতার পর হত্যাকান্ড আজও চলছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তার আদর্শ ও দর্শনকে নির্মূল করার প্রচেষ্টা থাকলেও তা বাস্তবতায় পরিণত হয়নি। ফলে এরই ধারাবাহিকতায় তৈরী হয়েছে বঙ্গবন্ধু দর্শনের কিংবদন্তী মানুষেরা।

সেই কালজয়ী কিংবদন্তী মানুষদের মধ্যে চিরভাস্মর হয়ে আছেন মহা কালের মহা নায়ক শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার। দেশপ্রেমিক একজন মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন হাজারো মানুষের জননন্দিত নেতা। তাঁর গঠন মূলক ও সৃজনশীল রাজনীতি গাজীপুরের গন্ডী পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছিল।

তিনি মনে প্রাণে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সততা ও নৈতিকতার বিমূর্ত প্রতীক। ফলে তৃণমূল মানুষের সাথে তাঁর অন্তরের মেলবন্ধন ঘটেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” এই অগ্নিমন্ত্রকে অন্তরে ধারণ করে দেশমাতৃকার মুক্তির আন্দোলনে তিনি ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।

তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও মানুষের মাঝে মিশে যেতে পারতেন। ফলে জীবনের নিরাপত্তার কথা তিনি কখনোও ভাবেননি। বাংলার ইতিহাসে যেমন মোহন লালও ছিল তেমনি মীরজাফরও ছিলেন। যেমন খন্দকার মোশতাকও ছিল, শহীদ সৈয়দ তাজউদ্দিন আহমেদও ছিলেন। মোহন লাল ও শহীদ সৈয়দ তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন মহানায়ক কিন্তু মীরজাফর ও মোশতাক ছিল বিশ্বাসঘাতক। নবাব সিরাজুদ্দৌলা ও বঙ্গবন্ধু যেমন মানুষদের সরল মনে বিশ্বাস করতেন তেমনি শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারও মানুষকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তাদের এই সরলতার কারণে আমাদের হারাতে হয়েছে অনেক মূল্যবান জীবন। যা কখনই পুরণ করা সম্ভব নয়।

আজও সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা সকল মানুষকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হচ্ছে। ফলে অকালে ঝড়ে পড়ছে সম্ভবনাময় আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রকৃত মানুষেরা। যারা অর্থ নয়, স্বাধীনতার আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করেন। বুদ্ধিজীবি হত্যার যে নগ্ন খেলা শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত আছে। এর প্রমাণ আমরা পেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর নির্মম হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। কিন্তু বিচারের বাণী যেন নিভৃতে কাঁদে।

৬ মে, ২০১৬ তারিখে জনকন্ঠে প্রকাশিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইএসবির টার্গেট। ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের আগামীর সম্ভ‍াবনা সজীব ওয়াজেদ জয়। এই বিষয়গুলো ছোট করে দেখবার মত নয়। বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন। তা না হলে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী ও সংস্কৃতবান মানুষদের যে লাশের মিছিল বাড়ছে তা আরো দীর্ঘ‍ায়িত হবে। যা কখনই কাম্য নয়।

আজ যদি শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার বেচে থাকতেন তবে তার প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ ত্বরান্বিত হতো। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার একজন শিক্ষক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর “শিক্ষা মানুষকে শিক্ষিতই করেনা, গৌরবান্বিত করে” মনে প্রাণে এ কথা তিনি বিশ্বাস করতেন। তিনি বলতেন ও বিশ্বাস করতেন শিক্ষকদের নিজের কাছেই জবাবদিহি করা উচিত। এ জন্যই তিনি হতে পেরেছিলেন শিক্ষক থেকে জনগণের গৌরবের জননন্দিত নেতা। লোভ লালসাকে পেছনে ফেলে ত্যাগ ও তীতিক্ষার মাধ্যমে তিনি গণমানুষের জন্য কাজ করে গিয়েছেন।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার মেহনতি শ্রমিকদের দাবী আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। জাপানের একটি ঘটনা তাঁর ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তাকে উদ্ভাসিত করে। জাপানী শ্রমিক নেতারা তাঁকে কিছু উপহার দিতে চাইলে তিনি তা আন্তরিকভাবে প্রত্যাখান করে জাপানের যাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংরক্ষণের কথা বলেছিলেন। যা আজ জাপানে গেলে সকলের চোখে পড়বে। এটা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর প্রকৃত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

তিনি ছিলেন বিশাল হৃদয়ের একজন মানুষ। মানুষের কল্যাণ ও শোষিত মানুষদের দাবী আদায়ে তিনি ছিলেন সবসময় সোচ্চার। তিনি তাঁর সন্তানদের বলতেন “দেখ, সাংসদ-পুত্র হয়ে তোমরা যেন কখনো দম্ভ করো না। ধনী
দরিদ্র সকলকে সমান চোখে দেখবে। সকলের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। মানুষের উপকার করবে। দম্ভ যদি কিছু
করার থাকে তবে তা করবেন তাঁরা, যাঁরা তোমার বাবাবে ভোট দিয়ে সাংসদ বানিয়েছেন”। এই আদর্শকে
ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন তাঁরই সুযোগ্য সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও
ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সর্ম্পর্কিত সাংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি।

এটি প্রমাণ করে আদর্শের কখনো মৃত্যু হয় না। আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যায় আগামীর প্রজন্ম। এই মহান মানুষটির ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে গাজীপুরে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হবে তা সকলেই অন্তরে লালন ও ধারণ করে।
কেননা ইতিহাস তাঁকে তৈরি করেনি, তিনিই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এই মহান নেতার মৃত্যুবাষির্কীতে তাঁকে
তখনই সম্মানিত করা হবে যখন তাঁর সততা, সরলতা ও আদর্শকে আমরা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম
হবো।তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মানুষ। কারণ তাঁর অসাধারণ কীর্তির চেয়েও তিনি ছিলেন মহান।

তাই বলতে ইচ্ছে করে –
“ তোমার কীর্তির চেয়ে, তুমি যে মহান
তাই তব জীবনের রথ
সম্মুখে ফেলিয়া যায়, কীর্তিরে তোমার”

খুনীরা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা করেনি, তারা হত্যা করেছে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী একজন
আগামীর বিশ্বনেতাকে। যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন বাস্তবে রূপায়িত হত। “কাঁদো বাঙালি কাঁদো”
এই অশ্রু সিক্ত বেদনার ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমাদের আজ শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী :বিভাগীয় প্রধান, যন্ত্রকৌশল বিভাগ ও রেজিস্ট্রার- ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এবং সভাপতি, শিক্ষক সমিতি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts