বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে ২৫ জানুয়ারি। ১৯৭২ সালের এদিনে রাশিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

ঢাকা-মস্কো উভয় পক্ষই কূটনীতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করবে। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।

এ উপলক্ষে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ঢাকায় প্রাপ্ত রুশ দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, আমাদের সম্পর্কের এই মাইলফলক বার্ষিকীতে আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুদের অভিনন্দন জানাই।

তিনি বলেন, আমাদের উভয় দেশ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ ছিল, এর ভিত্তি ১৯৭২ সালে স্থাপিত হয়েছিল যখন (তৎকালীন) ইউএসএসআর বাংলাদেশের জনগণের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করেছিল এবং নতুন রাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে প্রথম স্বীকৃতিদাতা দেশগুলোর অন্যতম ছিল। জাখারোভা বলেন, বাংলাদেশিরা সোভিয়েত সামরিক নাবিকদের কৃতিত্বের কথা স্মরণ রেখেছে, যারা ১৯৭২-১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের মাইন ও ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধার করে বন্দর পরিষ্কার করেছিল।

তিনি বলেন, আজ আমাদের উভয় দেশ একটি সক্রিয় রাজনৈতিক সংলাপ বজায় রেখেছে, যা সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। মুখপাত্র বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বছরে ২.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

তিনি লক্ষ্য করেন, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তঃসরকারি বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক কমিশনের প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুরের নির্মাণসহ বড় বড় অর্থনৈতিক প্রকল্প চলমান রয়েছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে অকুন্ঠচিত্তে সমর্থন দেয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। স্বাধীনতার পরেও চট্টগ্রাম বন্দরে ডুবে যাওয়া জাহাজ ও মাইন অপসারণে বিশেষ ভূমিকা রাখে রাশিয়া।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ মেধাবী শিক্ষার্থীকে রাশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক ও বিদ্যুৎ খাতে বিশেষ সহযোগিতা দেয় রাশিয়া।

সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হওয়ার পরেও মস্কোর সঙ্গে ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্কে ভাটা পড়েনি। দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক ধীরে ধীরে বেড়েছে। আগামী দিনেও দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দুদেশেরই শীর্ষ নেতারা।

দ্বিপক্ষীয় সফর
১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার এক মাস পরেই সে দেশ সফর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের মার্চে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান ও শীর্ষ নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা চান। তখন থেকেই দুদেশের সম্পর্কের শুভ সূচনা হয়। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মস্কো সফর করেন। সে সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক বাঘ সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়া সফর করেন শেখ হাসিনা।

সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ধীরে ধীরে সামরিক সহযোগিতা বেড়েছে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরকালে দেশটি থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের (প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা) সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। সে সময় বিমান ও ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র-যুদ্ধ বিমান কেনে বাংলাদেশ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেছে বাংলাদেশ।

বিদুৎ খাতে সহযোগিতা
বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশকে বিশেষ সহযোগিতা দিয়ে আসছে রাশিয়া। দেশের বিভিন্ন সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রাশিয়া কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তবে ২০১৩ সাল থেকে রাশিয়া বাংলাদেশের পাবনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এখানে দুটি ইউনিটে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে বাংলাদেশে বহুলাংশে বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Print Friendly

Related Posts