গুলশান-বনানীর অবৈধ দোকানপাট: অভিযানে চলে লুকোচুরি, সকালে উঠালে বিকালে বসে

জ.ই বুলবুল: গুলশান-বনানী অভিজাত এলাকাসহ লেকের শাহজাদপুর, গুদারাঘাট ও তার আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা, বস্তি ও টংঘর উচ্ছেদ করার পরে আবার বিকেলেই দখল নিয়েছে হকার ও বস্তিবাসীরা। এতে করে গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেটের মাঝে ফলের দোকান, লেকের ধারে নির্মিতব্য ওয়াকওয়ে আবারও হকারদের দখলে চলে গেছে। গুলশান-২ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেটের সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাত ভরে গেছে অবৈধ দোকানে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদে অভিযান চালালেও কখনোই সফল হয়নি তা। উচ্ছেদের পর বারবার ফিরে এসেছে হকার ও বস্তিবাসিরা। বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) ১২টার দিকে একবার উচ্ছেদ অভিযান করলেও বিকাল না গড়াতেই আবার দোকান খুলে বসে গেছে তারা।
হকারগণ বলেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তারা এভাবেই দোকান-পাট নিয়ে বসবেন বলে দম্ভোক্তির সুর দিয়েছেন। তারা বলেন, স্হানীয় সরকারদলীয় নাম ব্যবহারকারী অংগসংগঠন, বিট পুলিশ- এসব ম্যানেজ করেই আমরা ব্যবসা করে থাকি পএিকায় লিখলেও আমাদের কিচ্ছু হবে না।
জানা গেছে, গুলশান-১ ও ২ বনানীর কাঁচাবাজার, মহাখালী, হাতিরঝিল অংশ গুদারাঘাটে রাস্তা ও নির্মাণাধীন ওয়াকওয়ে দখল করে কাঁচাবাজারের ব্যবসা চালাচ্ছিল হকাররা। সম্প্রতি এ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় রাজউক। তবে উচ্ছেদ অভিযানের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও দোকানপাট নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে এক শ্রেনীর রাজনীতির নামধারী নেতাদের, কিছু পুলিশ সদস্যের পকেট ভারী হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রেজাউল নামে এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কাজই হলো উঠায় দিলে আবার বসা। যখন উঠায় দিবে চলে যামু যতক্ষণ সুযোগ রয়েছে ততক্ষণ ব্যবসা চালায় যামু টাকার বিনিময়ে। কিছু কইরা তো খাইতে হবে ভাই? একটা ব্যবস্থা তো করে দিতে হবে, আমাদের যাওনের তো জায়গা নাই তারউপরে করোনা।
আবেদিন নামে অপর এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, সব তো ভাইঙা দিছে। উপায়ান্তর না পাইয়্যা আমরা কয়জন অস্থায়ীভাবে আবার শুরু করছি। প্রত্যেকদিন পুলিশ আসে, চলে যেতে বলে। দেখি আবার কবে ওঠায় দেয়!
গুলশান ডিসিসি মার্কেটের সামনে অবৈধ স্হাপনার একাংশ
গুলশান শাহাজাদপুর ঝিলপাড়েরও দেখা গেল একই দৃশ্য। গুলশান লেকের ওয়াকওয়ের ওপরেই বেশ কয়েকজন হকার আলু-পেঁয়াজ, ফল, সবজি ও চায়ের দোকান নিয়ে বসেছেন। রহিম নামে এক চা বিক্রেতার দোকানে বসে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সম্প্রতি সময়ে চালানো অভিযান নিয়ে আলোচনা করতেও শোনা যায়। তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠেন, আমি ভয়ে দোকান নিয়ে বসতে পারছি না। যদি জরিমানা ও সব ভেঙে ফেলে দেয় তখন তো মালামাল ও টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। গরিবের ওপর দিয়ে যায় সব। একবারও ভাবছে না এতদিন ধরে ব্যবসা করে খাচ্ছি, এখন আমরা যাব কই?
এছাড়াও গুলশান-১ নম্বর থেকে গুদারঘাটের বিপরীতের ফুটপাত হয়ে লিংক রোডের দিকে এবং লেকপাড়ের রাস্তার পাশে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারে না সাধারণ পথচারীরা। কারণ এই এলাকার ফুটপাত জুড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বসে নানা দোকান। জামা-প্যান্টসহ নানা ধরনের পোশাক, ব্যাগ, মোবাইল এক্সসরিস, কাঁচা বাজার-সবজি, ফলমূল, মাছের দোকানসহ কী নেই এই ফুটপাতে! সাধারণ পথচারীদের জিম্মি করে এমন ৬০/৭০টি দোকান প্রতিদিন বসে এখানে। ফলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিসে শেষে থেকে হেঁটে ফেরার পথে বিড়াম্বনায় পড়েন পথচারীরা। ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী বাজার গড়ে তোলায় বাধ্য হয়ে পথচারীদের হাঁটতে হয় সড়ক ধরে। পথচারী সড়ক ধরে হাঁটার কারণে ওই সড়কে যানবাহনেরও সৃষ্টি হয় ধীরগতি।
গুলশান-১ নম্বর থেকে প্রতিদিন অফিস শেষে পায়ে হেঁটে উত্তর বাড্ডার বাসায় ফেরেন বেসরকারি চাকরিজীবী জুবায়ের আল হাসান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এই ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে আমাদের মতো সাধারণ পথচারীদের জন্য। ফুটপাতের মাঝখান দিয়ে একটু উঁচু করে ভিন্ন কালার দেওয়া আছে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার প্রতিবন্ধী তো দূরের কথা সাধারণ সুস্থ পথচারীরাই এটা ব্যবহার করতে পারে না। নানা দোকান, হকারদের দখলে থাকে এই ফুটপাত।
আরেক পথচারী সাব্বির আহমেদ বলেন, আমাদের মতো পথচারীরা যখন অফিস শেষে হেঁটে বাসায় ফিরতে চায় তখন দেখা যায় পুরো ফুটপাত দোকানিদের দখলে রয়েছে। সাধারণ মানুষ বা ক্রেতারাও সেসব দোকানে পণ্য কেনার জন্য ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যায়, ফলে হেঁটে যাওয়ার আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট থাকে না। বাধ্য হয়েই আমাদের মূল সড়কে নেমে যেতে হয়।
ভাই এই সন্ধ্যার দিকে অফিস শেষে প্রচুর মানুষ এই পথ দিয়ে চলাচল করে ফলে এখানে খুবই ভালো বেচাকেনা হয়। যে কারণে সবার আগ্রহ এই ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান বসানোর। এ জন্য সবাই এইদিকের লাইন ম্যানকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন টাকা দিয়ে এখানে দোকান বসিয়ে বেচাকেনা করে। আসলে আমাদেরও কিছু করার নেই,ওদের কাছে এক প্রকার জিম্মি আমরা। এই অবস্থা গুলশান-২ । ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়কে। এ ব্যাপারে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় ফুটপাত-সড়কসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকবে আমাদের।
সড়ক-ফুটপাত দখল মুক্তের অভিযানে তেমন একটা সুফল মিলছে না সাধারণ পথচারীদের। ব্যাপক হাঁকডাক দিয়ে অভিযান শুরু করলেও বর্তমানে এসে অনেকটাই গতি কমেছে ডিএনসিসির উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রমের। জনৈক ব্যাবসায়ী বলেন,তবে আগের মেয়রের আমলে এভাবে ফুটপাত দখলে ছিলো না। এখনের মেয়র কি এসবের খবর রাখে তা কিনা বোধগম্য নয়। স্হানীয় কমিশনারের মদদেই হচ্ছে! নতুবা তার  এগুলোও নজরে থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি। গুলশান-বনানীর অভিজাত এলাকার ফুটপাত দখল মুক্ত না থাকলে পরিবেশ নষ্টসহ আবাসিক এলাকার অভিজাত্য হারাবে বৈকি! তাই মেয়রের দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকায় বসবাসকারীরা।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts