কৃষিবিদদের গেজেটেড পদমর্যাদা পাওয়ার গৌরবময় দিন

আজ কৃষিবিদ দিবস। ১৯৭৩ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই কৃষিবিদদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা সূচিত হয়েছিলো ।

সরকারি চাকরিতে কৃষি গ্রাজুয়েটদের গেজেটেড পদমর্যাদা এবং সমমর্যাদার পেশাজীবীদের মতো মূল্যায়নের দাবিতে ষাটের দশকের আন্দোলন আজো কৃষিবিদদের কাছে অবিস্মরণীয়। এই দাবিতে ১৯৬৪ সালের ১৭ জুন থেকে ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় যা লাগাতারভাবে ১৭২ দিন অব্যাহত থাকে। ৪৭ জন ছাত্র ও ৫ জন পথচারী এ আন্দোলনের দায়ে দীর্ঘ দিন জেল খাটেন। মলয় বৈশ্য নামে একজন ছাত্রকে আত্মাহুতি দিতে হয়। দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে সে সময়ের প্রশাসন নমনীয় হলে ৭ ডিসেম্বর ছাত্র ধর্মঘটের অবসান হয়। ১৯৬৯ সালে দেশজুড়ে সূচিত ছাত্রদের ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবির আন্দোলনের সাথে কৃষি শিক্ষার্থীদের দাবিও অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় বিজয় অর্জনের পর ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। কৃষি শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসন্নচিত্তে মেনে নেন এবং সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন। এই ঐতিহাসিক অর্জনের স্মৃতিময় ১৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি কৃষিবিদ সমাজের জন্য এক গৌরবদীপ্ত ও অবিস্মরণীয় দিন।

এই অর্জনের দীর্ঘকাল পরে ২০১১-১২ মেয়াদে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ১৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি প্রতি বছর কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১২ সাল থেকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন দিনটি মর্যাদার সাথে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘কৃষিবিদ দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষিই বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রাণ। অনাদিকাল থেকে এদেশের মানুষ খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কৃষির উপর নির্ভর করে আসছেন। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্বাধীনতাত্তোরকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষির উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে কৃষির উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের চাকরি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা দেন। যা এদেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদদের জন্য ছিল ঐতিহাসিক মাইলফলক। ফলে অধিকতর মেধাবী শিক্ষার্থীরা কৃষি শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পদাংক অনুসরণ করে বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে কৃষিতে রোল মডেল। আমরা বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজিতে ৩য়, আলু উৎপাদনে ৭ম, কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, আম উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারাতে ৮ম, পাট উৎপাদনে ২য় এবং রফতানিতে ১ম। আমাদের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ২০০৮-২০০৯ সালের ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ২০২০-২০২১ সালে ৪ কোটি ৫৫ লক্ষ ৫ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী ‘কৃষিবিদ দিবস-২০২২’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

 

Print Friendly

Related Posts