১১তম দিনে গড়াল রেলওয়ে গেট কিপারদের আমরণ অনশন

বৃদ্ধি পাচ্ছে অসুস্থ সংখ্যা, এখনো মেলেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস

বাংলাদেশ রেলওয়ের মান—উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ১৮৮৯ জন গেট কিপারের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের দাবিতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও রেলপোষ্য এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৮৮৯ জন গেট কিপার রাজস্বকরণ বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চল’ এর উদ্যোগে কমলাপুর রেলওয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের আমরণ অনশন বুধবার (৯ মার্চ) ১১তম দিনে গড়াল।

দীর্ঘ অনশনের ফলে ইতিমধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং প্রায় শতাধিক গেট কিপার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

তার মধ্যে কুষ্টিয়া সেকশনের তামান্না, সোহাগ, রোমান, সিলেট সেকশনের ফাতেমা আক্তার, মনিরুল ইসলাম, আল মামুন, কুলাউড়া সেকশনের সাজ্জাদ, টঙ্গির লাকী আক্তার, লিজা, ফেনীর হালিমা খাতুন, ফাতেমা আক্তার, কাওসার, রুবেল, যশোর সেকশনের খোকন, শ্রীমঙ্গলের আব্দুল কাদের গাইন, আলমগীর লস্কর, জামালপুরের কাকলি বেগম, লালমনিরহাটের হালিমা আক্তার, পলাশ, হাফিজ মিয়া, শায়েস্তাগঞ্জের ফরহাদ, জামালপুরের ফয়েজ আহমেদ, চট্টগ্রামের আজিম উদ্দিন নিয়াজী, ফারুক আহমেদ, কিশোরগঞ্জের সোহাগ, দোহাজারীর জুয়েল, কেওয়াটখালীর আবু সাইদ আকন্দ বারডেম হাসপাতাল, নিওরো সাইন্স হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এমনকি রেলওয়ে গেইট কিপার কর্মী কুলাপাড়া সেকশনের ফাতেমা আক্তার সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি হলো। বাকিদের অনশন স্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

১১ দিন ধরে কমলাপুরের খোলা আকাশের নিচে গেইট কিপাররা অনশন চালিয়ে আসলেও এখনো পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেয়ার কোন সুর্নিদিষ্ট ঘোষণা আসেনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গেইট কিপাররা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অনশনের কারণে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হলে তার দায় রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

কর্মসূচিতে গেট কিপাররা বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নং—৪৭০ ই/গেইট কিপার নিয়োগ/প্রকল্প/সিই পূর্ব—২০১৬ (ডব্লিউ) তারিখ: ৩১/১০/২০১৬ইং, বিজ্ঞপ্তি নং—এসেট ৬০১/৫ (নিয়োগ) প্রকল্প সিই/পশ্চিম ২০১৬ (ডব্লিউ) তারিখ: ১৫/১০/২০১৬ইং মোতাবেক ১৮৮৯ জন গেইট কিপার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োজিত আছি। এর মধ্যে ৫৭২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ৫৫৫ জন রেলপোষ্য এবং ৩২৫ জন নারী গেট কিপার রয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর একনেক সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পের কর্মরত গেট কিপারদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করে চাকরি স্থায়ী করণে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত দৃশমান কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বহুবার স্মারকলিপি দিয়েছি, চিঠি দিয়েছি, আমাদের দুর্দশার কথা জানিয়েছি কিন্তু তারা আমাদের কোন কথায় কর্ণপাত করেনি।

তারা বলেন, নিয়োগের সময় গেট কিপারদের বেতন নির্ধারণ করা হয় সর্বসাকুল্যে ১৪,৪৫০/— টাকা। বিগত ৫ বছরে এ বেতন বাড়েনি। বেশির ভাগ গেটকিপার তাদের নিজ জেলা ব্যতীত অন্য জেলায় চাকরি করেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে বাসা ভাড়া, পরিবারের ভরণপোষণ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। অপরদিকে প্রায় সকলের বয়স ৩২ বছর অতিক্রম করায় অন্য চাকরিতেও ঢোকার সুযোগ নেই। নং—মপবি/ক:বি:শা:/কপগ—১১/২০০১—১১, তারিখ: ০৩/০৫/২০০৩ ও নং—মপবি/ক:বি:শা:/মক—০১/২০০৩—২৮, তারিখ: ২২/০১/২০০৩ প্রজ্ঞাপন মূল্যে অস্থায়ীভাবে সৃজনকৃত পদ হতে রাজস্ব খাতে প্রেরণ করা সম্ভব। অথচ আমাদের চাকরির মেয়াদ প্রায় ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তাই অবিলম্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আমাদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তর করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

অনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিভাগের গেইট কিপার সুজন আহমদ, মোঃ আল মামুন, কাওছার, মাহাবুব আলম মাফুল, আলফাহাজ, চট্টগ্রাম বিভাগের জাবেদুল হক, মোঃ মাসুদুল ইসলাম, পাকশি বিভাগের রূপা পারভীন, কাজী পিয়াশ, সোহেল, ছোটন প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts