নদী রক্ষার দাবিতে বুড়িগঙ্গায় ভাসানো হলো কাগজের নৌকা ও কলার ভেলা

আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস (International Day of Action for Rivers)-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে সোমবার (১৪ মার্চ) বেলা ১১টায় বুড়িগঙ্গা ব্রিজ এর নিচে (বছিলা পুরাতন বিদ্যালয় মাঠে) নদীকে নদীর মত রাখার দাবিতে ভাসানো হলো প্রতীকী কাগজের নৌকা ও কলার ভেলা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে এবং আলুবাজার বন্ধু সংঘ, ক্লিন রিভার বাংলাদেশ, ক্যাপস, গ্রীন ভয়েস, জাতীয় নদী জোট, জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, নদী অধিকার মঞ্চ, নদী পক্ষ, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, নিরাপদ চিকিৎসা চাই, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, সুবন্ধন, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, বছিলা উচ্চ বিদ্যালয়, বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থা, বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, বারোগ্রাম উন্নয়ন সংস্থা, রিভার এন্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার, রিভার এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ, শীতলক্ষ্যা বাঁচাও আন্দোলন, শিশুদের মুক্ত বায়ু সেবন সংস্থা, সেভ দ্যা রিভারস, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বাংলাদেশ, সচেতন নাগরিক সমাজ সংগঠন, সচেতন নগরবাসী, তুরাগ নদী সুরক্ষা কমিটিসহ প্রায় ৩০টি নদী ও পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের অংশগ্রহণে বুড়িগঙ্গায় এই কাগজের নৌকা ও কলার ভেলা ভাসানো কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক, শরীফ জামিল-এর সভাপতিত্বে এবং সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত থেকে সংহতি জানান বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন এর সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস, গ্রীন ভয়েসের মূখ্য সমন্বয়ক আলমগীর কবির, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, ক্লিন রিভার বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী সোহাগ মহাজন, নদী অধিকার মঞ্চ-এর নির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, বারোগ্রাম উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসাইন, বছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, নিরাপদ চিকিৎসা চাই-এর মহাসিচব উম্মে সালমা, শিশুদের মুক্ত বায়ু সেবন সংস্থার সহ-সম্পাদক সেলিম হোসেন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কোষাধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ অংশগ্রহণকারী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ।

কাগজের নৌকা ও কলার ভেলা ভাসানো কর্মসূচির শুভ উদ্বোধনকালে ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা নদী সৃষ্টি করেছেন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য। দেশের পঁয়ত্রিশ হাজার কি.মি নদী পথের এখন মাত্র আঠার শ কি.মি অবশিষ্ট রয়েছে। এখনি যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এই অবশিষ্ট পথও বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন দেশে নদী রক্ষার অনেক আইন আছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। নদী কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। দেশের নদী উন্নয়নের প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সেই জন্য সরকারের পাশাপাশি বাপাসহ দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে কাজ করতে হবে। আমরা শিল্পায়ন চাই কিন্তু শিল্পায়ন করতে গিয়ে দেশের নদ-নদী ও পরিবেশকে ধ্বংস করা হবে এ ধরনের শিল্পায়ন কখনই চাই না। গুটি কয়েক লোকের স্বার্থে দেশের নদী ও পরিবেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

এই ধরণের জঘন্য কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদেরকে ক্রিমিনাল অ্যাক্টের আওতায় এনে শাস্তির বিধান চালুর দাবী করেন তিনি। ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে অসমাপ্ত উচ্ছেদ কর্মকান্ড আবার চালু, পানি আইন দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরসমূহে সৎ ও যোগ্য জনবল নিয়োগ দিয়ে নির্বিঘ্ন কাজের পরিবেশ সৃষ্টির দাবী জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, “জীববৈচিত্রের জন্য নদী” দিবসটির প্রতিপাদ্য কিন্তু ঢাকার চারপাশের নদীর ক্ষেত্রে সেকথাটি আজ অর্থহীন। নদীমাতৃক এইদেশের নদীসংরক্ষণ ও উন্নয়ন দেশের টিকে থাকা ও অগ্রগতির প্রধানতম পূর্বশর্ত। আজ একটি ব-দ্বীপ অঞ্চলের নদী হিসাবে আমাদের একেকটি নদীর সাথে সম্পৃক্ত ছোট নদী, খাল, প্লাবন অঞ্চল ও অন্যান্য জলাশয়সমূহ সম্পূর্ণরুপে বিলীন হতে চলেছে। সঠিকভাবে নদীর সীমানা চিহ্নিত না করে ওয়াকওয়ে নির্মান করার মাধ্যমে দখলদারদের বৈধতা দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ^রী নদী ও নদীসমূহের সাথে সম্পৃক্ত খাল, প্লাবন অঞ্চল ও জলাশয় সমূহ বেপরোয়াভাবে ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। পানিতে শীতকালে কোন দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকেনা, তাই কোন প্রাণের অস্তিত্বও থাকেনা।

তিনি নদী রক্ষায় আইনসম্মত, সমন্বিত ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান।

মিহির বিশ্বাস সংহতি বক্তব্যে বলেন, যারা নদীগুলোকে দখল ও দূষণের মাধ্যমে গ্রাস করছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিাচর করতে হবে। আগে নদী তার পরে নগরায়ন।নদীকে মেরে নগরায়ন চাইনা।

আলমগীর কবির নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করে প্রবাহমান করার জোর দাবী জানান।

ইবনুল সাঈদ রানা জানান ঢাকার চারটি নদী কেন আজ ওয়েষ্ট ডিস্পোজালে পরিণত হয়েছে । এর পেছনে কারা দায়ী তাদের বিচারের দাবী জানান।

আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের নদী ও পরিবেশ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য দেশের স্কুল পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

এছাড়াও দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাটমোহর, পাবনা, ডিমলা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ভালুকা, যশোর, নড়াইল, খুলনা, বরিশাল, কক্সবাজার, মোংলা ও মহেশখালীতে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts