ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষ বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজুল হক ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগকারী ছাত্রীর কাছে লিখিতভাবে দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন । অভিযোগকারী ছাত্রী বলেছেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের নেওয়া সিদ্ধান্তে তিনি ‘সন্তুষ্ট ও ভয়মুক্ত’।
অধিকতর শাস্তির জন্য অভিযোগের চিঠিটি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে বিভাগের একাডেমিক কমিটি অভিযোগের চিঠিটি কর্তৃপক্ষের কাছে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১৮ এপ্রিল বাংলা বিভাগের একাডেমিক কমিটির ওই সভা হয়। সভায় বিভাগের ১৭ শিক্ষক অংশ নেন। গত মার্চে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগের এক ছাত্রী। ২৯ মার্চ বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় অভিযোগটি উত্থাপন করা হলে কমিটি সর্বসম্মতভাবে বিশ্বজিৎ ঘোষকে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ১৮ এপ্রিল বাংলা বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভায় অভিযোগের চিঠি উচ্চপর্যায়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে অন্য সিদ্ধান্তগুলো বহাল থাকছে।
বাংলা বিভাগের একাডেমিক কমিটির ২৯ মার্চের জরুরি সভার সিদ্ধান্তগুলো ছিল: সব একাডেমিক কার্যক্রম (সব ধরনের ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষায় প্রত্যক্ষণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, এমফিল-পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধান, পরীক্ষা কমিটির কাজে অংশগ্রহণ প্রভৃতি) থেকে বিশ্বজিৎ ঘোষকে অব্যাহতি দেওয়া, ভবিষ্যতে তাঁকে কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত না করা, সিঅ্যান্ডডি ও একাডেমিক কমিটির সভায় তাঁকে না ডাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে তাঁর নামে বরাদ্দ থাকা বিভাগীয় কক্ষ বাতিল, আরও বৃহত্তর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে কি না, অভিযোগকারীর মতামত সাপেক্ষে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তদন্তের সময়ও একাডেমিক কমিটির এসব সিদ্ধান্ত বহাল রাখা।
বিভাগের ১৮ এপ্রিলের জরুরি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজুল হক প্রথমে ২৯ মার্চের পরবর্তী ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করেন। চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওই সভা এবং ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত বিভাগের সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত বিশ্বজিৎ ঘোষকে জানানো হলে তিনি সংশ্লিষ্ট সেমিস্টারের মিডটার্মের উত্তরপত্র ও বিভাগীয় কক্ষের চাবি যথাসময়ে বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকেও জানানো হয়। তবে বিশ্বজিৎ ঘোষ ওই শিক্ষার্থীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাঁর কাছ থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করার উদ্যোগ নেন বলে জানা যায়। কয়েক দিন পর ২৯ মার্চের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে পড়ে, যা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।
অন্যদিকে বিশ্বজিৎ ঘোষ পত্রিকায় নিজেকে নির্দোষ বলা ছাড়াও যেসব উক্তি করেন, তা-ও ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। বিগত একাডেমিক কমিটির সভায় এবং আমাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তিনি দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও পত্রিকায় ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেন।’
কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বিশ্বজিৎ ঘোষ ১৬ এপ্রিল বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাঁকে রক্ষা করার লক্ষ্যে তিনটি প্রস্তাব করেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর চিঠিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে না পাঠানোর অনুরোধ করেন, শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রস্তাব করেন এবং শেষে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আগ্রহ জানান।
চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ ঘোষকে তাঁর বক্তব্য লিখিতভাবে জানাতে বললে ১৭ এপ্রিল নিজের হস্তাক্ষরে স্বাক্ষরসহ তিনটি চিঠি পাঠান। প্রথম চিঠিটি চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, দ্বিতীয়টি অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তৃতীয়টি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর স্বেচ্ছা অবসরের আবেদন করে লেখা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়। বিভাগের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ ঘোষের পাঠানো তিনটি চিঠি একাডেমিক কমিটির সদস্যদের সামনে পড়ে শোনান। কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত বিশ্বজিৎ ঘোষের মন্তব্য নিয়ে তাঁরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ, বিভাগের শিক্ষকদের কাছে দেওয়া তাঁর বক্তব্য ও পত্রিকায় দেওয়া বক্তব্য ছিল পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজুল হক গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’
বিশ্বজিৎ ঘোষের মুঠোফোনে একাধিক কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিশ্বজিৎ ঘোষ ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সূত্র: প্রথম আলো