চলে গেলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) রাত ১২টা ৫৬ মিনিটের দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ শোক জানিয়েছেন।

শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তি রচনায় আবুল মাল আবদুল মুহিতের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের অগ্রযাত্রায় তার অবদান জনগণ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী শোকবার্তায় সাবেক অর্থমন্ত্রীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ছিলেন তিনি। অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবে ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে যোগদান করেছিলেন। চাকরি করা অবস্থায় পাকিস্তান কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ও উপ-সচিব ছিলেন। ওই সময় তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন ও পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসে পেশ করেন।

ওয়াশিংটনে তৎকালীন পাকিস্তানের দূতাবাসে প্রথম কূটনীতিবিদ হিসেবে ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে নিজ অবস্থান তুলে ধরে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন মুহিত। তখন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়াশিংটন দূতাবাসে ইকনমিক কাউন্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব নিযুক্ত হনআবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন।

বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ, আইডিবি এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘স্মৃতি অম্লান ১৯৭১’-সহ এ পর্যন্ত ২১টি বই লিখেছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলনেরও পুরোধা আবুল মুহিত। বাপা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। ২০১৫ সালের ১৬ জুন তার নামে রাখা হয় সিলেট জেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের নাম।

Print Friendly

Related Posts