ডেসটিনির রফিকুলের ১২, হারুনের ৪ বছরের সাজা

ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণা করেন।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের এ মামলায় ৪৬ আসামির সবারই বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন তিনি।

আসামিদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. দিদারুল আলম, জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল জামিনে ছিলেন। আর রফিকুল আমীন ও কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ছিলেন কারাগারে।

দাণ্ডিত বাকি ৩৯ আসামি শুরু থেকেই পলাতক। তারা হলেন- ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, শেখ তৈয়বুর রহমান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, মো. আকবর হোসেন সুমন, আজাদ রহমান, মো. সুমন আলী খান।

এছাড়া শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, মো. মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, মো. শফিউল ইসলাম, ওমর ফারুক, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলম, সুনীল বরণ কর্মকার, ফরিদ আকতার, আবদুর রহমান তপন, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, সাকিবুজ্জামান খান, এসএম আহসানুল কবির, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন,গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মো. আতিকুর রহমান ও মো. শফিকুল হকও পলাতক।

দশ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় গত ২৭ মার্চ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। তারপর রায়ের তারিখ ঠিক করে দেন বিচারক।

এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২০২ জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত। এছাড়া আসামিদের মধ্যে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

দুদকের উপ পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা করেন।

তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রোজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হত।

দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাৎ করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলাটি রায় হল।

ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

Print Friendly

Related Posts