বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা
‘জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্য পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি করে। তামাক চাষ ফসলী জমি ও পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে। এজন্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার্থে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে’- ৩১ মে বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের আরবান প্রাইমারী হেলথ প্রকল্প কেন্দ্রে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমনটিই জানালেন আলোচকগণ।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, কারিগরি পরামর্শক, দি ইউনিয়ন, বাংলাদেশ; মো. আবদুস সালাম মিয়া, গ্রান্টস ম্যানেজার, সিটিএফকে-বাংলাদেশ, ডা. নায়লা পারভীন, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মেডিকেল সার্ভিসেস, স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক, ইউপিএইচসিএসডিপি-২, পিএ৩, ডিএনসিসি, ডাম এবং মো. শফিকুল ইসলাম, হেড অব প্রোগ্রাম্স-বাংলাদেশ, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার উম্মে জান্নাতের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার শারমিন আক্তার রিনি।
‘তামাকমুক্ত পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের দেশের ধূমপায়ীরা তাদের নিজেদের অজান্তেই শরীরে দীর্ঘমেয়াদী রোগের বাসা বাঁধিয়ে ফেলেন। এতে কেবল তিনি নিজের ক্ষতিই নয়, পরোক্ষ ধূমপান দ্বারা তার আশেপাশের মানুষদেরও ক্ষতি করেন সমান ভাবে।
ডা. নায়লা পারভীন, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মেডিকেল সার্ভিসেস, স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক, ইউপিএইচসিএসডিপি-২, পিএ৩, ডিএনসিসি, ডাম বলেন, তামাকজাত দ্রব্য নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ হলেও নারীদের ক্ষেত্রে এটি আরো ভয়াবহ। কারণ এটি নারীদের হরমোনাল ব্যালান্সকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ও নারীর রিপ্রোডাকটিভিটিকে ক্ষতি করে। এতে নারীদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। অথচ ইদানিংকালে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আমাদের মতো দেশের জন্য ভয়াবহ। ধূমপানের ফলে প্রিম্যাচিউড বাচ্চা প্রসব ও জন্মগত ক্রটি হওয়ার আশংকা অনেক বেশি।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, কারিগরি পরামর্শক, দি ইউনিয়ন, বাংলাদেশ বলেন, ধূমপান সকলের জন্যই ক্ষতিকর হলেও কম বয়সীদের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর। এটি তাদেরকে শারীরিকভাবে ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ও মানসিক ভাবেও পিছিয়ে দেয়। উপরন্তু তামাকজাত দ্রব্য দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশেরও ক্ষতি কর।
মো. আবদুস সালাম মিয়া, গ্রান্টস ম্যানেজার, সিটিএফকে-বাংলাদেশ বলেন, তামাকজাত পণ্যের ব্যবহারে কেবল নিজেরই স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হয় না, বরং পরিবার সহ আশেপাশে মানুষজনও পরোক্ষ ক্ষতির শিকার হন। এর পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির দিকটি তো রয়েছেই। আমাদের দেশে করোনার এই ৩ বছরেও তত মানুষের মৃত্যু হয়নি, যত মানুষের মৃত্যু তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে হয়েছে। বরং এই সংখ্যা অনেক বেশি।
মো. শফিকুল ইসলাম, হেড অব প্রোগ্রাম্স-বাংলাদেশ, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার স্বাস্থ্য, জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, আইন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে এটি কার্যকর করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে মোট ৭১ বিলিয়ন সিগারেট শলাকা উৎপাদিত হয়েছে। সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে প্রায় এক দশক সময় নেয়, আর মিশে যাওয়ার সময় এ থেকে সাত হাজারের বেশি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এসময় তিনি বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনের উপরও জোর দেন।
এর আগে ৩১ মে সকালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি)-এর উদ্যোগে আয়োজিত র্যালিতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন অংশগ্রহণ করে।