এ খান ॥ ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির প্রভাবশালী নেতা ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসদ সাথে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সাক্ষাৎ ও বৈঠকের ঘটনা বিএনপিকে দেশে-বিদেশে মারাত্মক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। প্রকাশিত একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন বিএনপিকে কোনঠাসা করে ফেলেছে। বিএনপি মহাসচিব আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেও তার বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তাও প্রশ্নসাপেক্ষ।
ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি সাফাদির সাথে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বৈঠক সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইসরাইল ও তার গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই। বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী মোসাদ কর্মকর্তা মেন্দি সাফাদিকে চিনেতন না। একজন তাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মাত্র। একই কথা বলেছেন স্বয়ং আসলাম চৌধুরী বলেছেন তিনি মেন্দি সাফাদিকে জানতেন না। তার সাথে কোন বৈঠক হয়নি। পরিচিত হয়েছেন মাত্র।
প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসদ এর কর্মকর্তার সাথে বিএনপি নেতা পরিচিত হওয়ার তাগিদবোধ করলেন কেন। অপরিচিত একজনের সাথে সাক্ষাৎ, বৈঠক এবং ভোজে আপ্যায়িত হওয়ার ঘটনাও নিতান্ত সৌজন্যমূলক হতে পারে না। এ নিয়ে প্যালেস্টাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঠেকাতে বিএনপির পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধি দল ঢাকাস্থ প্যালেস্টাইনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তার প্রতিক্রিয়াও সুখপ্রদ ছিল না।
বিএনপির নেতারা প্যালেস্টাইনী কূটনীতিককে জানিয়েছেন যে, তারা প্যালেস্টাইনে ইসরাইল কর্তৃক নির্মমভাবে শিশু, নিরীহ মানুষ হত্যাকান্ডের তীব্র সমালোচনা করে আসছেন বরাবর।ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বিএনপি নেতাদের জানিয়েছেন, মেন্দি সাফাদি ও আসলাম চৌধুরীর মধ্যে ইসরাইলী ধ্বংস, হত্যাযজ্ঞ নিয়ে কথা হয়নি। কথা হয়েছে অন্য বিষয়ে। বৈঠকটিও হঠাৎ করে হয়নি, পূর্ব নির্ধারিত।
এতেই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রদূতের গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কূটনীতির পরিভাষায় তিনি হতাশা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায়ই ব্যক্ত করেছেন। আসাদ প্রতিনিধির সাথে বৈঠক ও আলোচনার বিষয় সম্পর্কে তথ্য থাকার কথাও জানান তিনি।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্যালেস্টাইন কূটনীতিক বা ঢাকাস্থ মুসলিম দেশসমূহ, বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কূটনীতিকদের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তার দেশে কূটনৈতিক চ্যানেলে বার্তা পাঠিয়েছেন।
এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে যাতে বিএনপি সম্পর্কে বৈরি মনোভাব তৈরি না করে এজন্য বিএনপির কয়েকজন সাবেক কূটনীতিক নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকাস্থ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সাথে দেখা করে বিভ্রান্তি দূর করতে ড. মঈন খানকেও বলা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তারা কোন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ পাননি। তবে জোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন চ্যানেলে সৌদি আরব, আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে। বিএনপির নেতার এই ঘটনা তাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়।
এদিকে আভ্যন্তরীণভাবে ২০ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলসমূহ ছাড়াও অপরাপর ইসলামী দলসমূহ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে এ ঘটনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ মোসাদ এর সহায়তায় বিএনপি বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন আনার চক্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ করছেন।
এমনিতেই রাজনৈতিক-সাংগঠনিকভাবে বিপর্যন্ত অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। এই ঘটনা তাদেরকে কোনঠাসা করে ফেলেছে। ঘটনা এতেই থেমে থাকবে না। ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ধারক বলে পরিচিত বিএনপির বিরুদ্ধে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে সরকারি দল। আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে চট্টগ্রাম বিএনপিতেও নানা কথা আগে থেকেই রয়েছে। দেশের বাইরে অবস্থানরত নেতার আস্থাভাজন বলে চট্টগ্রামের নেতারা মুখ খোলেন না। খালেদা জিয়ার মামলায় দলটির নেতা কর্মীদের হতাশ করে আছে। এ ঘটনা তাদেরকে দারুণভাবে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ করেছে। যার প্রভাব পড়বে রাজপথের কর্মসূচিতেও।