উন্নয়নের নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ
অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। উন্নয়নের নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। উদ্বোধন হলো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর।
শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলক উন্মোচনের আগে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। মোনাজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এর আগে সড়ক পথে বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে টোল প্লাজায় টোল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং অতিথিদের গাড়ি চলাচলের মাধ্যমে আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতুর ফলক চত্ত্বরের দিকে এগিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। ফলক উন্মোচনের পর গাড়ি যোগে সেতু অতিক্রম শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু অতিক্রমের পর জাজিরা প্রান্তে শিবচরে জনসমাবেশে বক্তৃতা রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
ফলক উন্মোচনের আগে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। সমাবেশে প্রায় পাঁচ হাজার অতিথি অংশগ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে ছিলেন দেশের নীতি নির্ধারণী ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তৃতার পর প্রধানমন্ত্রী পদ্মা্ সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও ১০০ টাকার নোটে উন্মোচন করেন। এ সময় তিনি পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে সেতুর রেপ্লিকা তুলে দেন। এরপর তিনি সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।
এর আগে, পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ষড়যন্ত্র করে দুর্নীতিসহ নানা অপবাদ তুলে পদ্মা সেতু নির্মানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। যারা এই ষড়যন্ত্রের কারণে মানসিক যন্ত্রণা্ সহ্য করেছেন তাদের প্রতি আমি সহমর্মিতা জানায়।”
পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংশিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের আত্মমর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক। আজ প্রতিটা বাঙালি আনন্দিত। আমিও আনন্দিত।”
তিনি বলেন, “বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মানুষ তাদের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে। আমি বাংলাদেশের মানুষকে স্যালুট জানাই।”
পদ্মাসেতু নিমার্ণে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে উল্লে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন এটি বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “এ সেতু কেবল সেতু নয়। এর ৪২টি স্তম্ভ স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, “সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথায় বলতে হয় সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। জাতির পিতা শেখ মুজিব মাথা নোয়াননি। মাথা নোয়াতে শেখাননি। তারই নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা তারই অনুসারী।”
শনিবার সকাল ১০টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হন তিনি ।
রবিবার (২৬ জুন) ভোর থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুটি।
প্রসঙ্গত, দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর দাপ্তরিক নাম ‘‘পদ্মা সেতু’’। দেশের দীর্ঘতম এই সেতু রাজধানীর সঙ্গে মেলবন্ধন সৃষ্টি করলো দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে। দ্বিতল বিশিষ্ট দেশের দীর্ঘতম এই সেতুতে গাড়ি ও রেল দুটোই চলবে। সেতু নির্মিত হয়েছে কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে। সেতুতে থাকছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা। মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া, মাদারীপুর জেলার শিবচর এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরার সীমান্তবেষ্টিত পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক রয়েছে ১২.১২ কিলোমিটার।
১৯৯৯ সালে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। এরপর করোনাভাইরাস মহামারিতেও এক দিনের জন্য কাজ থেমে থাকেনি; দীর্ঘ সাত বছরের দিন-রাত হাজারও মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাস্তবে রূপ নিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।