শাহ মতিন টিপু
দিনটি আজ হুমায়ূন আহমেদ স্মরণের। এই যাদুকর সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১০ বছর আগে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি আমাদের ছেড়ে যান।
মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও আর ফেরেননি তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৬৪ বছর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হন এই কিংবদন্তি। সেদিন তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল গোটা জাতি।
হুমায়ূন আজো বেঁচে আছেন লাখো পাঠকের হৃদয়ে হৃদয়ে। তার লেখা পাঠকের কাছে ছিলো বিশেষ আকর্ষনের। তিনি যাই লিখতেন, তাই পাঠকের কাছে সমাদৃত হতো।
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। নেত্রকোনার এই সন্তানটি একদিন হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান জননন্দিত কথাশিল্পী, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন তিনি।
নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, এসব উপন্যাস তাকে এনে দেয় প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা। মৃত্যু অবধি তিন শতাধিক বই উপহার দিয়ে যান পাঠকদের।
হুমায়ূন আহমেদ ছোটগল্প লিখে আলোড়ন তুলেছেন, উপন্যাস দিয়ে মোহগ্রস্ত করেছেন। যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে তার। বিজ্ঞানের ছাত্র হুমায়ূন আহমেদ প্রথম উপন্যাসেই যে সাড়া ফেলেন, আর পেছন দিকে তাকাবারও প্রয়োজন হয়নি। হুমায়ূনের উপন্যাসের নাট্যরূপ ধারাবাহিকভাবে টেলিভিশনে প্রচারিত হলে সেখানেও দর্শকদের সাড়া। হুমায়ূন যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তা দেখতে শহর ভেঙে পড়ে। হুমায়ূন আহমেদ চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ও ঘেটুপুত্র কমলা সবগুলোই ছিল দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসা সফল।
চলচ্চিত্র বা নাটকের জন্য হুমায়ূন আহমেদ গান লিখেছেন, আবার তাতে সুরও দিয়েছেন, তা সমাদৃত হয়েছে।
‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো’, ‘চাঁদনী পসরে কে’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ’এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আমার ভাঙ্গা ঘরে ভাঙ্গা বেড়া ভাঙ্গা চালার ফাঁকে’, ‘চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’ হুমায়ূন আহমেদের লেখা এসব গান আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
লেখায় ও লেখার উপস্থাপনায় অসাধারণ সক্ষমতা ছিল হুমায়ূন আহমেদের। সৃজনশীলতার প্রায় সব শাখায় পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছিলেন।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
হুমায়ূন আহমেদ এর ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তাঁর ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে নানা আয়োজন নুহাশ পল্লীতে
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার নিজ হাতে গড়া নুহাশ পল্লীতে নানা আয়োজনে পালিত হবে দিবসটি। পবিত্র কুরআন খতমের মাধ্যমে কর্মসূচী পালন শুরু হবে। সকাল ১০ টায় প্রিয় লেখকের কবর জিয়ারত করবেন তার পরিবার ও ভক্তরা।
দিনটি স্মরণ করতে ও কবর জিয়ারতের জন্য নুহাশ পল্লীতে আসবেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তার দুই ছেলে। জানিয়েছেন নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল।
বুলবুল জানান, লেখকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল থেকে কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে এতিমদের খাওয়ানো হবে।
এ ছাড়া হিমু, মিছির আলী, রূপা কিংবা বাকের ভাই’র নন্দিত রূপকারের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন হিমু পরিবহন-গাজীপুর জেলার সদস্যরা।
হিমু পরিবহন-গাজীপুরের জেলার সদস্য লিংকন ইসলাম বলেন, স্যারের মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে।