বিদেশের মাটিতেও সঙ্গীতের আলো ছড়াচ্ছেন শিল্পী উপমা

বি‌নোদন প্রতি‌বেদক : দেশের পর বিদেশের মাটিতেও নিরবচ্ছিন্নভাবে সঙ্গীতের আলো ছড়িয়ে দেশের মুখ উজ্জল করছেন কণ্ঠশিল্পী উপমা। তিনি বতর্মানে ডেনমার্কে প্রবাস জীবন যাপন করছেন। সেখানে থেকেই তিনি বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে দিতে সব সময় সচেষ্ট আছেন।
তারই অংশ হিসেবে গত (১৬ জুলাই) শনিবার দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পযর্ন্ত স্পেনের বার্সেলোনার প্লাসা মাকবায় বাংলার মেলায় তিনি গান পরিবেশন করেন। তাঁর গান পরিবেশনের সময় দর্শকদের মুহুর্মহু চিৎকার করোতালি ও তাঁর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গান গাওয়াই বলে দেয় দর্শক শ্রোতাদের উচ্ছাস ও মুগ্ধতার কথা।
স্পেনে গান পরিবেশন বিষয়ে কণ্ঠশিল্পী উপমার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়। এই বিষয়ে তিনি বলেন, এইতো আমি ইউরোপ যাওয়ার পরে আমার প্রথম শো স্পেনের বার্সেলোনাতে শোটা হলো। আমি আনন্দিত উচ্ছসিত। আমি বাংলা গানকে এভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চাই। এর জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। সবাই যেনো আমাকে অনুষ্ঠান দিয়ে সহযোগিতা করেন।
উল্লেখ্য যে, কণ্ঠশিল্পী শারমিন সুলতানা উপমা বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁর ধ‍্যান জ্ঞান স্বপ্ন সাধনা সব কিছু এই সঙ্গীতকেই ঘিরেই আবর্তিত হয়। তিনি একাধারে লাইভ কনসার্ট, টিভি সঙ্গীতানুষ্ঠান, প্লেব্যাক, মিউজিক ভিডিও ইত্যাদি মাধ্যমগুলোতে অসাধারণ পারফর্মেন্স করার মাধ্যমে দর্শক শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছেন অনেক আগেই।
উপমা বলেন, গানের ভুবনে আমি ছোট বেলা থেকে আছি। তখন আমার বয়স চার বছর। আমার খালাতো বোনরা গান শিখতো। আমিও তাদের সাথে বসে যেতাম। আর একদম ছোটবেলা থেকেই আমার সুর-তাল-লয় সব ঠিক ছিল। টিভিতে গান দেখে দেখে অনেক বড় শিল্পী হবো ভাবতাম।
তিনি তাঁর গানের তালিম নেওয়া বিষয়ে বলেন, আমি প্রথমে গান শিখেছি হাফিজউদ্দিন হীরার কাছে। তিনি আর্মি অরকেসটার ছিলেন। তারপর নজরুল একাডেমীতে তিন বৎসর শিখেছি। বাসায় টিচার থাকতো সব সময়, তারপরে রেডিওর কলকাকলিতে এনলিস্টেড হই, তারপর কিছুদিন রেডিওর চীফ মিউজিক ডিরেক্টর নিজামুল হক পুলক উনার কাছে তালিম নেই, তারপর আরেকজন রেডিওর চীফ মিউজিক ডিরেক্টর আতিকুর রহমান স্যারের কাছে প্রায় ৬ বছর উনার কাছে শিখি। তারপর ক্লাসিকাল শিখি আমার ওস্তাদ আর্মি অর্কেস্ট্রার আল হেলাল উনার কাছে।
মৌলিক গানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মৌলিক গান সব মিলিয়ে প্রায় ৫০টার মত হবে। এর মধ্যে ফিল্মে ছয়টা করেছে। মিক্সড অ্যালবামে করেছি। আমার ইউটিউব চ্যানেলে করেছি, লেজার ভিশন আমার অনেক গান আছে, সি এমবি, সিডি চয়েজ, জিসান মাল্টিমিডিয়া, সুরঞ্জলি, জি সিরিজ, গানচিল, ধ্রুব মিউজিক, প্রথম আমার এলবাম বের হয়েছে সংগীতার ব্যানারে। ঐখানে সাতটা গান ছিল। অ্যালবামের নাম ছিল উপমা ওয়ান।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ এ আমার শেষ গান ছিল ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে প্রকাশ পেয়েছিল। এবছর শুরুতে জানুয়ারিতে আমার শেষ গান প্রকাশ পেয়েছে “ইউটিউব চ‍্যানেল এলএসবিটিভিতে”। কিছুদিন আগে আমার একটা গান রিলিজ হয়েছে “ইচ্ছে করে ভালবাসতে” শিরোনামে। গানটার কথা দেলোয়ার আরজুদা শরাফ ভাইয়ার। এটা একটা মিক্স অ্যালবাম। সিঙ্গার রাকিব ও আমি উপমা ডুয়েট গান। গত মাসে রিলিজ হইছে। গান নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা। বাংলা গানকে আমি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চাই। আল্লাহ যদি সহায় থাকেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পর্কে উপমা বলেন, আমার স্কুল ইস্পাহানি স্কুল এন্ড কলেজ। এরপর সিদ্ধেশ্বরী কলেজ ও গুলশান কলেজ। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে আমি ইংলিশে অনার্স কমপ্লিট করেছি। আমার আশা ছিল আমি বিদেশে মাস্টার্স করব উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবো, ইনশাআল্লাহ। কর্মজীবন বাংলাদেশেই শুরু করি। আমরা নেটওয়ার্কে একবছর জব করি। তারপর বিদেশে পাড়ি জমাই। এখন আমি ডেনমার্কে আছি। ইনশাল্লাহ ডেনমার্কে থেকেই বাংলা গানের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাবো।
ছোট্ট বেলার ইচ্ছে বিষয়ে উপমা বলেন, ছোট বেলায় আমার ইচ্ছে ছিল আমি নায়িকা হবো। আমি শাবনুর ম্যাডামকে দেখে ভাবতাম তাঁর মত হবো। তখন খুব ছোট পাঁচ বছর বয়স হবে। এখানে মজার একটা কথা আছে। আমার স্কুলের ম্যাডাম পড়াতে আসলে আমি বলতাম যে, আমি তো লেখাপড়া করব না ম্যাডাম। জিজ্ঞেস করছিলেন কেন? আমি বলতাম আমি নায়িকা হবো। এখনো মনের মধ্য থেকে সেই সূক্ষ্ম ইচ্ছাটা যায়নি।
বাবা মা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার জন্মের আগে আমার মা-বাবা ঢাকায় অবস্থান করতেন। তাই ঢাকাতে আমার জন্ম। আমরা চার ভাই বোন। তিন ভাই আর আমি এক বোন। ঢাকাতেই আমার বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়া সবকিছু। বাবা বিজনেস ম্যান। মা গৃহিণী। আমার মায়ের ইচ্ছাতেই আমার গান বাজনা। আমার লেখাপড়া সবকিছুতেই আমার মায়ের পরিচর্যা বিদ‍্যমান রয়েছে।
তাঁর প্রিয় গান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার প্রিয় গান অনেক। আমাদের দেশের রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন ও শাহনাজ রহমাতুল্লাহর সব গান আমার পছন্দ। ছেলেদের মধ্যে সুবীর দার গান আমার অনেক পছন্দ। আর পুরনো দিনের গান আমার ভালো লাগে সবচেয়ে বেশি। নতুনদের মধ্যে বেলাল খান ও ইমরান ভাইয়া ওদের গান আমার ভালো লাগে’।
সব শেষে দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার দর্শক-শ্রোতাদের একটা কথাই বলবো, ভালো গান শুনবেন। ভালো গানের সাথে থাকবেন। ভালো শব্দচয়নের গান শুনবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। যেন আমি আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করার কাজে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখতে পারি।
উল্লেখ্য যে, উপমার একটি ভক্ত শ্রেণী তৈরী হয়েছে সবখানে। সেই কথা মাথায় রেখে তিনি সক্রিয়ও থাকেন তাঁর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল, ফেইসবুক অফিসিয়াল ভ্যারিফাইড পেইজ, ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে।
Print Friendly

Related Posts