নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের মধ্যে ডিম নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান দেখা গেছে। কৃষিমন্ত্রী ড.মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক দেশীয় পোল্ট্রির স্বার্থ সংরক্ষণে ডিম আমদানির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি সাধারণ মানুষের সস্তায় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনে ডিম আমদানির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায় সয়াবিন তেল, মসুরের ডাল, চিনি ও পাম তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি দামে এককোটি পরিবারের কাছে বিক্রির জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল ও মসুরের ডাল কিনেছে। এছাড়াও পাম অয়েল ও তেলের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চালও ন্যায্যমূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব কিছু করা হচ্ছে ভোক্তাদের স্বার্থে।
তিনি বলেন, দেশে ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার মত তেমন কোন কারণ নেই। কিছুদিন আগেও ডিম ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসময় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোকে তারা দাম বৃদ্ধির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
সূত্র জানায়, ডিম হচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রোটিন মেটানোর অন্যতম উৎস। কিন্তু বাজারে ডিমের দাম এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ মানুষ ডিমে হাত দিতেও ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদি বিদেশ থেকে ডিম আমদানির অনুমোদন দেয় সেটা হবে সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য। দেশীয় শিল্প বাজানোর নামে কোন অবস্থায় জনগণকে বাজার ফটকাবাজিদের শিকার হতে দেওয়া ঠিক হবে না। এতে তাদের আরও উৎসাহিত করা হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিলো ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়।
এছাড়া, এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৯০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়। আর প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ৮০০ টাকা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বলে জানা গেছে, বাজারে মাছের সরবরাহ আগের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও সেই দাম কমেনি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। যা সাধারণ ক্রেতাদের সাধ্যের বাইরে। বড় সাইজের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ অবস্থায় স্থানীয় বাজারে অসম মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ডিম আমদানির প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় একটি ডিম ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ভারতের কলকাতায় মাত্র ৫ টাকা। দেশে ডিমের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন আমদানি প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করছে।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে এক কোটি (১ কোটি পিস) ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. মেহেদী হোসেন বলেন, এক টাকা আমদানি কর দেওয়ার পর এখানে এক পিস ডিম ৭ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, শুনেছি কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ডিম আমদানির বিরোধিতা করেছেন। তবে, সরকার যদি বাংলাদেশের জনগণকে কম দামের ডিম সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়, তবে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া উচিত।
প্রস্তাবে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বাংলাদেশের নাগরিকরা কম দামে ডিম খেয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। এখন ডিমের বেশি দামের কারণে মানুষ প্রোটিন নিতে পারছেন না বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার।
গত বৃহস্পতিবার কৃষিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, কোনো অবস্থাতেই ডিম আমদানি করা উচিত নয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো স্থানীয় চাহিদা মেটাতে, কিন্তু আমরা ডিম আমদানি করবো না।
এরআগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মনে করলে ডিম আমদানি করা যেতে পারে। দাম আলোচনা করা যেতে পারে। আমি ভারত থেকে ডিম আমদানি করে কম দামে ভোক্তাদের কাছে দেওয়ার পক্ষে। ডিম আমদানির ইঙ্গিত দেওয়ার পরই দেশের বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমে যায়। সম্প্রতি আবার বাড়তে শুরু করেছে।
ওই দিনই টিপু মুন্সী বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত কাগজপত্র কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, কৃষকদের স্বার্থও দেখা উচিত।
এক মাস আগে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে ডিমের দাম অনেক বেশি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যধিক বেড়েছে। ডিমও এর ব্যতিক্রম নয়। এ অবস্থায় ডিমের দাম কমাতে প্রয়োজনে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।