বিজয় ধর: বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ (২৭ সেপ্টেম্বর)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো-‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
অরণ্যসুন্দরী রাঙামাটিকে ঘিরে থাকা সবুজ পাহাড় আর নীল হ্রদের মুগ্ধতায় এখন আর বিমুগ্ধ হচ্ছেন না দেশি বিদেশি পর্যটক।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পর এখানকার সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী খাত হিসেবে বিবেচনা ও আলোচিত হয়েছিলো বিকাশমান পর্যটন খাত। কিন্তু পাহাড়ের রাজনৈতিক অবস্থা, পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা পর্যটন খাতকে স্থবির করে রেখেছে। এখানকার পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিস্ট অনেকেরই এই অভিমত। তাদের মতে,পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো ‘নিয়ন্ত্রিত মুভমেন্ট’ পর্যটকদের জন্য বাধা হয়ে রয়েছে।
রাঙামাটিতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ঝুলন্ত ব্রিজ। নয়নাভিরাম বহুরঙা এই ঝুলন্ত সেতুটি দুইটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে এক অনন্য সম্পর্ক। সেতুটি পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি আপনাকে এনে দেবে ভিন্ন দ্যোতনা। এখানে দাঁড়িয়েই কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন। কিন্তু প্রায় ৩৮ বছর পরেও এই পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু আগের মতোই আছে। নেই কোন নতুনত্ব, পুরনো জরাজীর্ণ দোলনা, বাচ্চাদের খেলনার বিভিন্ন রাইডগুলো আগের মতোই পরে আছে।
পর্বতপ্রেমি পর্যটকরা যেতে পারেন সুভলং অভিমুখে। পাহাড় হ্রদের নিবিড় নৈকট্যে পর্যটক মনেও সৃষ্টি করতে পারে ভিন্ন এক অনুভূতি। কিন্তু একটাই দুর্ভাগ্য শীত মৌসুমে ঘুমিয়ে থাকে এখানকার পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো। কিন্তু সারাবছর যাতে এ ঝর্ণা জীবিত রাখা যায় সে ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এখানকার পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন গা ছাড়া ভাব নিয়ে।
ডিসি বাংলোটি পর্যটকদের জন্য বৈকালিক ভ্রমণের এক অন্যতম স্থান। এ ডিসি বাংলো পার্কে বসে অবলোকন করা যায় কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য। এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনা ও খেলার মাঠ।
রাঙামাটি জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে এটি একটি নতুন সংযোজন। রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টুরিস্টরা এই পার্কে ভিড় জমায়। এই পার্কে রয়েছে শিশুদের জন্য কিছু রাইড, মিনি ঝুলন্ত ব্রিজ, কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেঁষে নব নির্মিত বেশ কিছু কটেজ।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি যেকোনো টুরিস্টকে বিমোহিত করে তুলে। এই কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ করতে প্রতিবছর শীত মৌসুমে হাজারো পর্যটক রাঙামাটি ভ্রমণ করেন। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে হ্রদের সৌন্দর্য হারায় এবং টুরিস্টরা ঐসময়ে রাঙামাটি বেড়াতে আসলে এক বুক বেদনা নিয়ে ফিরে যান।
রাঙামাটি পর্যটনে ঘুরতে আসা পর্যটক সালমিনা বলেন, বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগাতে পারলে আমার মনে হয় ভ্রমণের জন্য কাউকে আর বিদেশে যেতে হবে না।
পর্যটক কংকন বলেন, রাঙামাটি হচ্ছে পর্যটন প্রসারের ক্ষেত্রে একটি অপার সম্ভনাময় স্থান কিন্তু জানিনা কি কারণে এই এলাকাটি উন্নত হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে আজ অবধি এক টাকাও লোকসান গুনেনি।
রাঙামাটি কাপ্তাই আসামবস্তি সড়কের কামিলাছড়ি মৌজায় গড়ে উঠা রাইন্যাটুগুন ইকো রিসোর্টের চেয়ারম্যান ললিত সি চাকমা বলেন, এখানকার বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে পর্যটক আসতে চায় না। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য কোন আলাদা ব্যবস্থা নেই। এখানে টুরিস্টদের পর্যাপ্ত আস্থা ও বিশ্বাস এর অভাব রয়েছে।এখানে সরকারের অবকাঠামোগত পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললে চলে।
তিনি বলেন, পর্যটন খাতে বরাদ্দ কম, বিদেশি পর্যটক নাই, কিন্তু দেশি পর্যটক বাড়ছে । কিন্তু আমরা তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে পারিনি। সেই জন্য টুরিস্টরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, শুভলং ঝর্ণাকে সরকারিভাবে উদ্যোগে নিয়ে সারাবছর যাতে পানি থাকে সে ব্যবস্থা করা যায়। পানির উৎসে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃক্ষ লাগানো এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বার্গী লেক ভ্যালির পরিচালক সুমেধ চাকমা বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং উন্নয়ন বোর্ড চাইলে কাপ্তাই আসামবস্তি সড়কে পর্যটকদের জন্য যাত্রী ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, টয়লেট সুবিধা করে দিতে পারে। এর পাশাপাশি কিছু দোকানপাট ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পও হাতে নিতে পারে।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সুজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, পর্যটন খাতে সরকারের আলাদা কোন উন্নয়ন বরাদ্দ নেই, আমরা নিজেদের লভ্যাংশ দ্বারাই উন্নয়ন ও আনুসঙ্গিক খরচ করে থাকি।
তিনি বলেন, রাঙামাটি পর্যটনে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো টুরিজ্যম বোর্ড। কিন্তু করোনার কারণে সেই প্রকল্প আর বাস্তবায়ন হয়নি।