বিডিমেট্রোনিউজ॥ পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। এর নামকরণ রোয়ানু কেন? এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোয়ানু’।
মালদ্বীপ এ নামটি প্রস্তাব করেছিল। রোয়ানু শব্দটিও মালদ্বীপের। এর অর্থ নারিকেলের ছোবড়ার তৈরি দড়ি।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের এই নামকরণ বিষয়টি নতুন নয়। প্রথম যে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছিল, সেটা ছিল প্রায় তিনশ’ বছর আগে শ্রীলংকার মহাপরাক্রমশালী রাজা মহাসেনের নামে। আর এ ব্যাপারে নাম প্রবর্তনকারী জাতিসংঘের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়া সংস্থা ‘এস্কেপ’।
সময়ের আবর্তে ঋতু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে নানা রকম ঝড় সংঘটিত হয়। তার আবার বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এর কোনটির উত্পত্তিস্থল সমুদ্র। আবার কোনটির স্থলভাগ। আমাদের দেশের স্থল ভাগের ঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডো, ইত্যাদি। সাধারণত অবস্থান এবং ঋতুর বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যের কারণে কতগুলো এলাকায় মাঝে মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়ার কারণও বেশ সহজ। এগুলোর এমন নাম দেয়া হয় যেন বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষ সহজে মনে রাখতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া অফিসগুলো এই নামকরণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব পায় ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থা। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড থেকে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়।
যখনই কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়, এই দেশগুলো থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়। এর আগেও ফলিন, হুদহুদ, নিলুফার নামেও নামকরণ করা হয়। ভারতের ছিলো অগ্নি, আকাশ, বিজলী, জাল লেহার, মেঘ। অনিল, অগ্নি, নিশা, গিরি এগুলো ছিলো বাংলাদেশের দেয়া নাম।
আগে ঘূর্ণিঝড়কে ঘিরে নামকরণ করা হতো ঝড়ের উত্পন্ন অবস্থানকে নিয়ে। তা আবার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ভিত্তিক। এ প্রেক্ষাপটে যদি বলি ৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের ঝড়টি এখন চট্টগ্রাম থেকে এক হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছে, তাহলে মনে রাখা সম্ভব নয়।
কিন্তু যদি বলা হয় ‘সিডর’ চট্টগ্রাম থেকে এক হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছে, তাহলে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সবাই অনায়াসে বুঝতে পারবেন।
এই নামকরণের কাজ করেন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি। তাই এই অঞ্চলেরঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে নামকরণের দায়িত্ব পড়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের। সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের আগেই নামকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে—এর মধ্যে মহাসেন আঘাত হেনেছে, এরপর আসবে ফাইলিন।