কাওছার আহমেদ: টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের লিজা আক্তার বিথী। বাবা ছিলেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি। পরিবারের আর কারো উপার্জন না থাকায় তাদের কোন রকম সংসার চলতো। তারপরও বাবার পরামর্শে শিক্ষা জীবনে তার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ভালো ফলের পর বিথী একজন সফল বিসিএস ক্যাডার।
বিয়ের পর সংসার সামলানোর পাশাপাশি স্বামীর নির্দেশে গর্ভবতী অবস্থায় বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। চার মাসের শিশু সন্তান নিয়ে ভাইবা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি সফল হন। এই সফল বিসিএস ক্যাডার বিথী এবার তিনি নির্বাচিত হয়েছেন জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ জয়িতা।
লিজা আক্তার বিথীর বাবা দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের নলশোধা গ্রামের মীর লুৎফর রহমান। বর্তমানে তিনি ৩৭ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে ফেনীতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে ৩৬ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ এর আওতায় টাঙ্গাইলে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
লিজা আক্তার বিথী জানান, তিনি ১৯৯১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তারা তিন ভাই বোন। অন্য কোন আয়ের ব্যবস্থা না থাকায় বাবার একার উপার্জনে সংসার এবং সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালানো খুব কঠিন ছিলো। তারপরও লিজা আক্তার বিথী পার্শ্ববর্তী বাসাইল উপজেলার দেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর দাপনাজোর মার্থালিন্ডস্ট্রম ও নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদালয় সপ্তম শ্রেণি পাস করেন। বাবা ঘাটাইল শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস (এমইএস) এ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে তাদের নিজের কর্মস্থলে নিয়ে যান। ২০০৬ সালে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০০৮ সালে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ হতে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফিশারিজে অনার্স এবং একোয়ালচারে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তিনি ২০১৪ সালেই বিয়ে করেন।
তিনি আরও জানান, বিয়ের আগে বাবা ও বিয়ের পর স্বামীর উপর নির্ভর করতেন তিনি। তার শাশুড়ি ক্যান্সার আক্রান্ত থাকায় বিয়ের পর চাকরির জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। ছয় মাস পর শাশুড়ি মারা যান। সংসারের পাশাপাশি চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করাটা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর নিজের ইচ্ছা ও স্বামীর উৎসাহে তিনি বিসিএস এর জন্য পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর তিনি সন্তান সম্ভবা হলে সংসার সামলানো এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা আরও কষ্টকর হয়। তারপরও এ অবস্থায় ৩৬ তম বিসিএস ভাইবা এবং ৩৭ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলি এবং লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। চার মাসের শিশু সন্তান নিয়ে ৩৭ এর ভাইবা দেন। ৩৬ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। ৩৭ তম বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে ফেনীতে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে সহকারী কমিশনার(ভূমি) হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যাস্ত আছেন।
লিজা আক্তার বিথী বলেন, বিয়ের পর সংসার ও সন্তান সামলে চাকরির জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা খুব কঠিন ছিল। তারপরও আল্লাহ রহমত ও স্বামীসহ পরিববারের সকলের উৎসাহ এবং সবার দোয়ায় সফল হয়েছি। সকলের সহযোগিতায় মানুষের সেবা করতে চাই।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) কণিকা মল্লীক বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রতি বছর জয়িতা নির্বাচন করা হয়। জয়িতা হতে হলে যে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়, লিজা আক্তার বিথীও অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আজ সফল হয়েছেন। লিজাকে দেখে আরও অনেক নারী অনুপ্রাণিত হবে।