সজিব মিয়ার কুড়ি টাকার দোকান

সুদীপ্ত শামীম: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেকারির চর গ্রামের সাত বছরের মো. সজিব মিয়া। মাত্র কুড়ি (২০) টাকা দিয়ে দোকান শুরু তার।

সুন্দরগঞ্জ সদর থেকে তিস্তা বাজার হয়ে একটু পূর্ব দিকে গিয়ে সোজা উত্তর দিকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পাড়ি দিলে তবেই পাওয়া যাবে সজিব মিয়ার কুড়ি টাকার দোকান।

কৃষি শ্রমিক বাবা আমজাদ হোসেনের বাড়ি ছিল হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি গ্রামের হাজারির হাট এলাকায়। বারবার তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারা হয়ে অবশেষে ঠাঁই নিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেকারির চর ও কুড়িগ্রামের উলিপুরের চর বিরহিম সীমান্তের ধুধু বালুচরে।

পাট খড়ির ছাউনি ও বেড়া দিয়ে তৈরি সজিবের দোকান ঘর। তাতে নেই কোনো পাটাতন। মাটির মধ্যে রয়েছে চটি বিছানো, তাতে বসেই দোকানদারি করে সজিব। দোকানে পাওয়া যায়, পাউরুটি, বনরুটি, সিঙারা, সামুচা, ক্রিমবল, বালুশাসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্য। দোকানে পান পাওয়া গেলেও মিলবে না কোনো বিড়ি, সিগারেট বা জর্দা। রয়েছে পানি পানের জন্য জগ ও গ্লাস। ক্রেতা বলতে ওই মাঠে কাজ করা কৃষক আর শ্রমিক। আশপাশে কোনো দোকান না থাকায় দৈনিক বিক্রি হয় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া সজিব মায়ের দেওয়া টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জমাতে পেরেছিল মাত্র ২০ টাকা। মাস কয়েক আগে সেই টাকা দিয়ে দোকান শুরু করা এই শিশুর বর্তমানে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭০০ টাকা।

সজিব মিয়ার মা সুমি আকতার বলেন, ‘ভিটেমাটি নেই আমাদের। অন্যের দেওয়া একচিলতে মাটিতে বাড়ি করেছি। ঘর বলতে ওই একটি চালা আর রান্নার জন্য রয়েছে পলিথিন দিয়ে তৈরি একটি ছাউনি। স্বামীর মতো আমিও মানুষের জমিতে কাজ করি। কখনো কাজ পাওয়া যায় আবার কখনো তাও জোটে না। আমাদের কষ্টের জীবন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সজিব আমাদের একমাত্র সন্তান। সে খুব মিতব্যয়ী। টিফিনের টকা বাঁচিয়ে মাত্র কুড়ি টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। এখন তা ৭০০ টাকা হয়েছে। সজিব পৃথিবীর কঠোর বাস্তবতা বুঝতে পেরে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে এই শিশু বয়সে তাতে আমরা অনেক খুশি।’

দোকানে ক্যামেরা তাক করায় বেশ উৎফুল্ল মনে হলো সজিবকে। এসময় সজিব মিয়া বলেন, ‘মা-বাবার অভাব। মা-বাবাকে সাহায্য করতেই টিফিনের ২০ টাকা দিয়ে এ দোকান শুরু করছি। আমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে দোকানে বসি। এতে যা আয় হয় তা মায়ের হাতেই তুলে দেই। দোকান চালাতে আমাকে আমার মা অনেক সাহায্য করেন। তিনি আমাকে বিভিন্ন বিষয় শিখিয়ে দেন, মাঝেমধ্যে তিনিও দোকানে এসে বসেন।’

Print Friendly

Related Posts