ইফতেখার শাহীন, বরগুনা: হারিয়ে যাচ্ছে বরগুনার আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহি সুস্বাদু খেজুরের রস। রস আহরণে গাছিরা কোমরে দড়ির সাথে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ এখন আর দেখা যায়না। চোখে পড়েনা গ্রাম বাংলার সেই দৃশ্য, তেমনি দুস্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও। অথচ খেজুর গাছ হারিয়ে গেলে এক সময় হারিয়ে যাবে খেজুর রসের ঐতিহ্য। দেখা মেলে না শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষির, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম।
এখন আর আগের মত খেজুরের রসও নেই, নেই সে পিঠে পায়েসও। বরগুনা সদর, বেতাগী, তালতলী, আমতলী, পাথরঘাটা ও বামনায় সুস্বাদু এই খেজুরের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হতো বিভিন্ন রকমের গুড়ের পাটালি ও নালি গুড়।
বরগুনা সদরের গৌরিচন্না ইউনিয়নের লাকুরতলা গ্রামের গাছি আনছার উদ্দিন বলেন, আগে আমাদের দারুন কদর ছিল। মৌসুম শুরুর আগ হতেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খেজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু, আগের মতো তেমন খেজুর গাছও নেই আর গ্রামের লোকেরাও এখন আর কেউ ডাকেনা।
খেজুর গাছ হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ইট ভাটার জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারের জন্য বেপরোয়া খেজুর গাছ নিধন। এতে দিনে দিনে বরগুনা জেলাজুড়ে আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে খেজুরের গাছ।
এ বিষয়ে বরগুনা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মোঃ জোবায়দুল আলম বলেন, যত্রতত্র ইট ভাটা গড়ে ওঠায়, ভূপৃষ্ঠের রুপ পরিবর্তন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। এছাড়া অসাধু ইটভাটার মালিকরা অধিক মুনাফার লোভে খেজুর গাছ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছে। যে কারণে বরগুনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। আর এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করা দরকার।