নাব্যতা সংকটে হবিগঞ্জের অর্ধশতাধিক নদী

হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সুতাং নদী শুকিয়ে এখন ফসলের মাঠ

 

মো. মামুন চৌধুরী: হবিগঞ্জ জেলার অর্ধশত ছোটবড় নদী নাব্যতা সংকটে পড়েছে। এছাড়া নদী দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে প্রভাবশালী লোকজন। ফলে কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলে নৌ যোগাযোগ ও চাষাবাদ এখন হুমকিতে পড়েছে।

হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে ৪৫টি নদী খননের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও কখন তা বাস্তবায়ন হবে বলতে পারছে না এ দপ্তরটি। এ অবস্থায় নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা ।

নাব্যতা সংকটে পড়া নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে- শাখা বরাক, বিজনা, ডেবনা, রত্না, বিবিয়ানা, খোয়াই, শাখা কুশিয়ারা, কালনী, গাপলা নদী, ভেড়ামোহনা, গোপলা বিজনা, নাড়াইজল, করাঙ্গী, সুতাং, শুটকি, কুদালিয়া, ফুলকুচি ইত্যাদি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে নদীতে আগে বড় ধরনের নৌযান চলতো এগুলোর অধিকাংশেরই এখন ‘ঘটি ডুবে না’ অবস্থা। পাহাড়ি ছড়া দিয়ে নেমে আসা বালু ও পলি জমে কিছু নদীর উৎমুখ ভরাট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে নদী দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা।

প্রবহমান বরাক, কুশিয়ারা, গোপলাবিজনা ও বিবিয়ানা নদীর শত কিলোমিটার নৌ-পথজুড়ে এখন নাব্যতা সংকট। শুকনো মৌসুমে এগুলোতে পানি থাকে না। তবে বৈশাখ মাস আসলেই পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যায় পানি ফুলে উঠে বিলীন হয়ে যায় ফসলি জমি।
কুশিয়ারা নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার জুড়ে চরে জেগে উঠেছে। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীকে ঘিরে থাকা হাজারো শ্রমিক কর্মহীন থাকছেন বছরের অধিকাংশ সময়।

বরাক নদীর প্রায় ২৫ কিলোমিটার ভরাট হয়ে নৌ-পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর অনেক স্থানে ধান চাষ করা হচ্ছে। নবীগঞ্জ ও মৌলভীবাজার উপজেলাকে সংযোগকারী ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিবিয়ানা নদীর বুক পানিশূন্য থাকে অন্তত ছয় মাস। পলি পড়ে রীতিমত ফুটবল খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে অনেকাংশ। একই অবস্থা গোপলা বিজনা নদীরও। নদীর বৈরী আচরণের কারণে ঠিকমতো ফসল ঘরে উঠাতে পারেন না হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নদীগুলো খননের কথা বলা হলেও তা করা হয়নি।

সাজিদ মিয়া নামে এক নৌশ্রমিক জানান, বরাক, কুশিয়ারা, গোপলা বিজনা ও বিবিয়ানা নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এখন নৌকা না চলায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীগুলোতে ঠিকমতো পানি না থাকায় মাছ কমে গেছে। নৌ-পথকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শতাধিক হাট-বাজার জৌলুস হারিয়েছে। এজন্য তারা শিগগিরই নদীগুলো খনন ও অবৈধ দখলমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নদীগুলো দিনদিন অস্তিত্ব বিলীনের দিকে গেলেও সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে করে নদীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।

হবিগঞ্জ জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হোসাইন মাহমুদ জানান, নবীগঞ্জের শাখা বরাক নদীকে দখলমুক্ত করে খননের জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলায় ৫টি করে মোট ৪৫টি নদী খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। একনেকে পাস হলে কাজ শুরু হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts