লক্ষ্মীপুরে সরিষা চাষে বিপ্লব

জাহাঙ্গীর লিটন: সয়াল্যান্ড হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুরে এবার সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। জেলার কৃষকরা এখন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এছাড়া কৃষি বিভাগ থেকেও সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে চাষিদের। ফলে জেলার অধিকাংশ সবুজ মাঠ এখন মনকাড়া হলুদ সরিষা ফুলে রঙীন।

কৃষি বিভাগ জানান, সরিষা চাষিদের সর্বাত্মক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকারি প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে চাষিরা বলছে, সরিষা চাষে তারা কৃষি বিভাগ থেকে বীজ এবং সার পাচ্ছেন। আর চাষাবাদে অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ এবং শ্রম কম লাগছে।

সরিষা ফুল চাষি এবং লোকজনের কাছে আর্কষণীয় হওয়ায় অনেকে সখের বশেও সরিষার আবাদ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে, গত মৌসুমে জেলাতে ৯৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এবার সরিষার আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে দেড়গুণ।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে রায়পুরে। এ উপজেলার চাষিরা ৭৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। এছাড়া সদর উপজেলার ৩৫০ হেক্টর, কমলনগরের ১৮০ হেক্টর, রামগঞ্জে একশ হেক্টর, রামগতিতে ৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

জেলাতে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষার আবাদ বাড়াতে কৃষকদের সরকারিভাবে প্রনোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার ৪ হাজার ৮০০ কৃষককে এক কেজি করে সরিষা বীজ, ড্যাপ সার ১০ কেজি ও এমওপি সার ১০ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে।এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাও একশ কৃষককে এক কেজি করে সরিষার বীজ দিয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়ন ও চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক কবির, সিরাজ মোল্লা, মোস্তফা কাজী, সফিক উল্যাসহ কয়েকজন কৃষক জানান, সরিষা লাভজনক ফসল। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ক্ষেত থেকে ফলন উঠে। আমন ধান কাটার সাথে সাথেই তারা জমি চাষ দিয়ে বীজ বপন করেছেন। সরিষা উঠে গেলে ওই জমিতে সয়াবিন বা ডাল জাতীয় শস্য আবাদ করতে পারবেন। তাই এ সময়টাতে অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষাবাদকে তারা উত্তম মনে করছেন। চাষাবাদে তারা বীজ এবং সার সরকারিভাবে পেয়েছেন।

একই এলাকার কৃষক নুরুল আলম বলেন, ৩৩ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকার মতো। গাছ ফুলে ফুলে পূর্ণ হয়ে গেছে। এ অঞ্চলে এবার সরিষার ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে।

মো. সোহেল হোসেন নামে আরেক সরিষা চাষি জানান, তিনি ১ একর ৬০ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। এতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার টাকা। এবার চাষাবাদ ভালো হয়েছে তার।

ওই এলাকার কিশোর জেহাদ হোসেন বলেন, আমাদের এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে সরিষার চাষ হয়েছে। ক্ষেতগুলো ফুলে ফুলে ভরে গেছে। সবুজ মাঠ এ হলুদে পূর্ণ হয়ে আছে। সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সরিষার মাঠ। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সরিষা ক্ষেত দেখতে আসছেন এবং ক্ষেতের ছবি তুলে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, জেলায় এবার অন্যান্য মৌসুমে চেয়ে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে মাঠের চাষিদের পরামর্শ এবং সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ মৌসুমে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলার একশ কৃষকের মাঝে বীজ সরবরাহ করেছি।

Print Friendly

Related Posts