পলিনেট হাউসে ফুল চাষ

অদিত্য রাসেল: লাল নীল সাদা হলুদসহ নানা রঙের ফুল পলিনেট হাউসে চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন সিরাজগঞ্জের কৃষক শহিদুল ইসলাম। পলিনেট হাউজের মাধ্যমে শীতের ফুল গরমে এবং গরমের ফুল শীতে চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি।

শুধু তাই নয়, পলিনেট হাউসে ফুলের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসল সারা বছরই চাষাবাদ করা হচ্ছে।

জানা যায়, সফল ফুল চাষি শহীদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার পলিনেট হাউসে ফুল চাষ করতে বছরে খরচ হচ্ছে ৫-৬ লাখ টাকা। আর ফুল বিক্রি করে বছরে তিনি লাভবান হচ্ছেন ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা।

এ বছর শহীদুলের ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই হাউসে গাদা, গোলাপ, চন্দ্র মল্লিকা ফুলে ছেয়ে গেছে।বর্তমানে ফুল তুলতে ও বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শহিদুল। দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ফুল বিক্রি করা হচ্ছে। ফুলের চাহিদা রয়েছে অনেক। তার দেখা দেখি এ অঞ্চলের আরো অনেক কৃষক পলিনেটে হাউসে ফুল ও সবজি চাষে উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুজন কৃষক কাজও শুরু করেছেন।

সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রতনকান্দিতে একটি পলিনেট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। এই পলিনেট হাউসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চ মূল্যে যেসব ফসল ও ফুল রয়েছে তার চাষাবাদ করা। বিশেষ করে লেটুস, ক্যাপসিকাম, বিভিন্ন জাতের ফুল। আবার শীতকালীন ফুল ও ফসল গ্রীষ্মকালীন সময়ে চাষ করা যায়।

পলিনেট হাউসে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন করা হয়। অনেক সময় শৈত্য প্রবাহ, খরা, অতিবৃষ্টির কারণে উচ্চমূল্যের ফসলগুলো চাষাবাদ করতে সমস্যা হয়। কিন্তু পলিনেট হাউসে এই সমস্যাগুলো থাকবে না। আগাম ফসল এখানে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এর ফলে কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। আর্থিকভাবে কৃষক লাভবান হচ্ছেন।

শহীদুল ইসলাম বলেন, পলিনেট হাউসে চাষাবাদ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে অনেক নিরাপদ থাকা যাচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে উন্নত মানের টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস, ফুল কপি, বাঁধা কপি চাষাবাদ করতে পারছি। এক সময় ফসল চাষাবাদের পর জমি ফাঁকা থাকতো। তখন কোন কিছু চাষাবাদ করতে পারি নাই। কিন্তু পলিটেন আসার পর এখন আর জমি পতিত থাকে না। এবছর ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফুলের চাহিদা রয়েছে অনেক। আশা করছি এখান থেকে ভালো মুনাফা পাবো।

তিনি আরও বলেন, আমার পলিনেট হাউসে ফুল ও ফসল চাষাবাদ ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলের আরো অনেক কৃষক পলিনেটে হাউসে ফুল ও সবজি চাষে উদ্যোগ নিয়েছেন।

কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষ লাভজনক। কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিয়তই সহযোগিতা করছে এবং নিয়মিত খোাঁজ খবর নিচ্ছে। সমস্যা হলে সমাধানের চেষ্টাও করছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পতিত প্রবন রায় বলেন, পলিনেট হাউসে ফুল চাষ জেলায় এই প্রথম। পলিনেট হাউসে দীর্ঘমেয়াদী ফুল চাষ করা যায়। শীতের ফুল গরমে এবং গরমের ফুল শীতে চাষাবাদ করা যায়। এটি খুব লাভজনক ব্যবসা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল পরামর্শ দেওয়া হয়। পলিনেট হাউস
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি অতিবৃষ্টি এবং গ্রীষ্মকালে অনেক সময় ফসলের চারা মরে যায়। তবে পলিনেট হাউজে ১২ মাস যে কোন ফুল যে কোন সবজি চাষাবাদ করতে পারবেন কৃষক।

স্থানীয় তারেক হোসেন ও শাহিন আলম বলেন, নদী ভাঙন অঞ্চলে পলিনেট হাউজে ফুলের চাষাবাদ হচ্ছে। এত বড় পলিনেট হাউস আর কোথাও নাই। শহিদুল ইসলামের পলিনেট হাউস দেখার জন্য অনেকেই আসেন। বিভিন্ন রংয়ের ফুল দেখতে খুব ভালো লাগে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলায় একটি পলিনেট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। এই পলিনেট হাউসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চ মূল্যে যে ফসল ও ফুল রয়েছে তার চাষাবাদ করা।

 

Print Friendly

Related Posts