আরিফুল ইসলাম: ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করেই এখন সংসার চলছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলহরিবাড়ী গ্রামের ফারুক হোসেনের।
বিলহরি মাঠে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছিলেন ফারুক। সেখানেই দেখা হলো তার সঙ্গে। আলাপকালে তিনি জানালেন, ঘোড়াটি তিনি মালামাল পরিবহন করার জন্যই কিনেছিলেন, এখন হালচাষ করছেন।
সংসারের খরচ জোগাতে ঋণ করে তিনি এই ঘোড়াটি কেনেন। এরপর ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করে মালামাল পরিবহন শুরু করেন। দুই বছর ধরে এভাবে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। এবার চলনবিলজুড়ে বোরো ধানের আবাদ শুরু হওয়ায় কদর বেড়েছে হালচাষিদের। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেই ঘোড়া দিয়ে হালচাষ শুরু করেছেন ফারুক হোসেন। এভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে- এই নিয়ে ফারুক হোসেনের সংসার। ঘোড়ার আয়ই তার বাঁচার উপায়। এবারই প্রথম ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন জানিয়ে ফারুক হোসেন বলেন, জমিজমা না থাকায় ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল পরিবহন করে সংসার ও ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছিলেন। এবার ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে সংসার খরচের পরও সঞ্চয় করতে পারছেন।
প্রতি বিঘা ৩০০ টাকা চুক্তিতে বোরো খেতে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করেন ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, এভাবে দিনে ছয়-সাত বিঘা জমি চাষ দিয়ে থাকেন। ঘোড়ার খাদ্য বাবদ খরচ হয় ৩০০ টাকা। সব খরচ বাদ দিনে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা লাভ থাকে। বছরের অন্য সময়ে ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল বহন করে এত টাকা আয় করা সম্ভব হতো না।
ঘোড়া দিয়ে হালচাষের আয়–ব্যয় সম্পর্কে ফারুক হোসেন জানান, দেড় মাস হয়েছে হালচাষ করছেন। তার ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে এবং মেয়ে ফারজানা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পড়াশোনা, যাতায়াত ও সংসারের অন্যান্য খরচে গত এক মাসে তার ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার টাকা। এই সময়ে হালচাষ করে আয় হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। ফলে সঞ্চয় করতে পেরেছেন ২০ হাজার টাকা।
ফারুক হোসেন আরও বলেন, ঘোড়া শক্তিশালী প্রাণী হওয়ায় কাঁধে জোয়াল দিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকলেও দ্রুত এগিয়ে চলে, হাঁপিয়ে যায় না। এ কারণে অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ জমি চাষ করা যায়।
গরুর চেয়ে ঘোড়া দিয়ে হালচাষে বেশি লাভবান হওয়া যায় জানালেন স্থানীয় কৃষক আবদুল হান্নান, আসকান আলী ও জয়নাল আবেদীন। তারা জানান, ঘোড়া দিয়ে জমি গভীরভাবে খনন করা হয়, মই দেওয়ার সময় জমির উঁচু-নিচু জায়গাগুলো ভালোভাবে সমান হয়। এতে জমিতে পানি ধরে রাখা সহজ হয়। এক দিনেই প্রায় চার বিঘা পর্যন্ত জমিতে চাষ দেওয়া সম্ভব হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, এখন গরু দিয়ে হালচাষের প্রবণতা কমেছে। তবে ঘোড়া দিয়ে হালচাষের ঘটনাটি এলাকায় নতুন।