গাছে গাছে সজনে ডাঁটার ফুল

মোসলেম উদ্দিন: চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে গাছে গাছে ফুটেছে সজনের সাদা ফুল, আর মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মধু সংগ্রহে। তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে বাজারে উঠবে এসব সজনে ডাটা।

গ্রাম-বাংলার একটি সুস্বাদু খাবার সজনে ডাঁটা। এক সময় এ ডাঁটার চাহিদা ও দাম কম থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। প্রথমদিকে বাজারজাত করতে পারলে বেশ দাম পাওয়া যায়।

দিনাজপুরের হাকিমপুর বোয়ালদাড় গ্রামের লতিফা বেগম। প্রতি মৌসুমে সজনে ডাঁটা বিক্রি করেন। এটি তার উপার্জনেরও বড় মাধ্যম। প্রতিবারের মতো এবারও দাম ভালো পাওয়ার প্রত্যাশা সাজেদার।

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন শহর-গ্রাম ঘুরে দেখা যায়- রাস্তা-ঘাট, পুকুরপাড়, জমির আইলে, বাড়ির আঙিনায় ও তার চারপাশে বিভিন্ন স্থানে সজনে গাছ।

এবার প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত ফুল এসেছে। সুস্বাদু এবং দাম বেশি হওয়ায় এখন প্রায় বাড়িতেই সজনের দেখা মেলে। নিজেদের চাহিদা পূরণ করে অনেকে বাজারজাতও করেন। আর প্রথমদিকে বাজারজাত করলে দাম পাওয়া যায় কেজিতে ১৫০ টাকাও বেশি।

লতিফা বেগম বলেন, ‘আমার দুটি সজনে গাছ আছে। একটির বয়স প্রায় ৮ বছর। প্রতিবছর প্রচুর সজনে আসে এই গাছে। এ বছরও প্রচুর ফুল এসেছে। আশা করছি ভালো ফলন হবে। বাড়িতে খেয়েও আমি অনেক সজনে বিক্রি করি। গতবার প্রথম দিকে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম। সজনে বিক্রির টাকায় সংসারের অনেক চাহিদা পূরণ করে থাকি।

ঘোড়াঘাটের ওসমানপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সজনে ডাঁটা শরীরের জন্য অনেক উপকার। বাড়ির ভেতরে একটি গাছ আছে। আমি বিক্রি করি না। নিজে খাই এবং প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের দিই।’

হিলি বাজারে সবজি কিনতে আসা লুৎফর রহমান বলেন, বাজারে সবজি কিনতে এসেছি। সব জায়গায় সজনে গাছে ফুল এসেছে। তাই ভাবলাম বাজারে পাওয়া যায় কি-না। এখনও উঠেনি। তবে কয়েক দিন আগে ভারতের সজনে ডাঁটা দেখেছিলাম। দাম ২০০ টাকা কেজি।

হিলি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, এখনও দেশি সজনে ডাঁটা উঠতে শুরু করেনি। তবে আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আসবে। বাজারে ক্রেতারা সজনে ডাটার খোঁজ নিচ্ছেন। সারা বছর এ ডাঁটার চাহিদা আছে।

সজনে ডাঁটা চাষ বা গাছ লাগাতে কোনো খরচ নেই। এমনকি যত্নও লাগে না। বর্ষাকালে সজনে গাছের ডাল কেটে তা যেকোনো জায়গায় লাগিয়ে দিলেই আপন শক্তিতে বেড়ে উঠে। ডাল লাগানোর পরে মৌসুম শুরু হলে সজনে ফুল আসতে শুরু করে।

বর্তমানে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে সজনে গাছ লাগাচ্ছেন। অনেকে তাদের বাড়ির আশপাশের ফাঁকা জায়গায় বর্ষাকাল আসলেই সজনে ডাল রোপণ করেন বাড়তি লাভের আশায়। কেননা এ থেকে ফল পেতে কোন বাড়তি খরচ বা শ্রম দিতে হয় না। একদিকে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অন্যদিকে বাজারে দামও বেশি পাওয়া যায়।

Print Friendly

Related Posts