বাংলা একাডেমির টাস্কফোর্সের নির্দেশে প্রবাসী লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতির বই বিক্রি বন্ধ করেছে নালন্দা। বইমেলার নীতিমালা পরিপন্থী ব্যক্তি আক্রমণ ও বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য থাকার অভিযোগে বইটি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টাস্কফোর্স নালন্দা প্রকাশনীকে এ সিদ্ধান্ত জানায়।
নালন্দা প্রকাশনীর প্রকাশক রেদোয়ানুর রহমান জুয়েল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিকেলে বাংলা একাডেমির টাস্কফোর্স এসে জান্নাতুন নাঈম প্রীতির ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’ বইটি বইমেলার স্টলে প্রদর্শন ও বিক্রি করতে নিষেধ করে। পরে আমরা মেলার স্টলে বইটি প্রদর্শন ও বিক্রি বন্ধ করি। তবে বইমেলার বাইরে প্রকাশনীর স্টলে ও অনলাইনে বইটি পাওয়া যাবে।’
বাংলা একাডেমির টাস্কফোর্সের সভাপতি ও বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি অসীম কুমার দে বলেন, ‘এ বইটিতে বইমেলার নীতিমালা পরিপন্থী নানা বিষয় রয়েছে। ব্যক্তি আক্রমণ ও বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য রয়েছে। যার কারণে আমরা চলমান অমর একুশে বইমেলা থেকে বইটির প্রদর্শন ও বিক্রয় বন্ধের জন্য প্রকাশককে জানিয়েছি। প্রকাশক আমাদের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।’
বইমেলায় জান্নাতুন নাঈম প্রীতির লেখা ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’ বইটি বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। বইমেলার টাস্কফোর্স এ বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা নালন্দা প্রকাশনীকে বইটি বিক্রি করতে নিষেধ করেছে।
দৈনিক আমাদের সময়ের অনলাইন ভার্সনে উল্লেখ করা হয়, দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের দিকে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলেছেন তরুণ লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতি। প্রবাসে থাকা এই লেখিকা আত্মজীবনীমূলক বই ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’র পাতায় তুলে ধরেছেন অনেক অজানা কথা। অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়া এই বইটি নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বইটি প্রকাশ হয়েছে কলকাতার বইমেলায়ও। আর বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
নালন্দা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত এই বইয়ে প্রীতি লিখেছেন- ‘এই লোলুপের দল বাদেও একে একে আমার জীবনে এসেছিল যে প্রেমিকেরা, তাদের দেখে প্রেম বলে কিছু নেই জেনে চেষ্টা করেছিলাম এক নতুন জীবন কিছুদিনের জন্য বেছে নিতে, যেখানে হাত বাড়ালেই সঙ্গী, হাত ছুঁলেই প্রেম!
সেই ধারাবাহিকতায় শুয়েছিলাম গিয়াসউদ্দিন সেলিমের সাথে। শুয়ে শুয়েই সেলিমকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কতগুলো মেয়ের সাথে শুয়েছ তুমি?
সে উদাস গলায় বলেছিল- ‘পঞ্চাশের ওপরে হবে। যাদের সঙ্গে শুয়েছি তাদের অধিকাংশেরই নাম ভুলে গিয়েছি! কথায় কথায় সেলিম বলেছিল- জয়ার সাথে শুয়েছিলাম টানা কয়েক বছর।’
জয়া মনে? অভিনেত্রী জয়া আহসান?
আরে হ্যাঁ! একবার কী হয়েছে জানো?
কী!..’
এখানেই শেষ নয়, লেখিকা তার ১৭৩ পৃষ্ঠার বইয়ের নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনেক কথাই বলেছেন অকপটে। তবে বইয়ে থাকা শোবিজের এই মানুষগুলোর কথা এখন ভাইরাল ফেসবুকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তরুণ লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতি বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। লেখালেখির কারণে বহুদিন আত্মগোপনে থেকে দেশ ছাড়তে হয়েছে তাকে। বইমেলায় তার প্রকাশিত এই বইটি ইতিমধ্যেই ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। আর বইটির নাম রাখা হয়েছে ‘বিটুইন টু লেগস, বিটুইন টু স্টেটস’। এই বইটিও আগামী মার্চের মধ্যে প্যারিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যাবে। ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’ বইটি লিখতে দুই বছরেরও বেশি সময় নিয়েছেন লেখিকা।
বইটি সম্পর্কে প্রীতি জানিয়েছেন, যেকারণে এই বইয়ের নাম- ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’।
তার কথায়, ‘এটি শুধুমাত্র একজন নারীর আত্মকথা নয়, বরং সমাজ ও রাজনীতির ভিক্টিম একজন প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে সংগ্রামের আখ্যান। মূলত এই বইটি মানবাধিকারের জন্য লড়াই করা মানুষদের জন্য একটি প্রামাণ্য দলিল, যেখানে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার নামক আয়নায় ক্ষতবিক্ষত একজন মানুষ কেমন করে বাঁচে, তা উঠে এসেছে এর নিগূঢ় ও নিখুঁত ব্যক্তিগত হয়েও বৈশ্বিক বয়ানে। পাশাপাশি উঠে এসেছে সারা পৃথিবীতে অন্যায় আর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামের স্বরূপ।
বইটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এই বইয়ের সততা, যেকারণে এই বইয়ের লেখককে সময় নিতে হয়েছে প্রায় দুই বছর। নিরাপত্তার খাতিরে দেশত্যাগ করে প্যারিসে নির্বাসনের নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে তিনি বইয়ে লিখেছেন সেইসব সত্য, যেসব সত্য ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে রয়ে যাবে মানবসভ্যতার ইতিহাসকে উজ্জীবিত করতে।
লেখক বিশ্বাস করেন, ইতিহাস বলে যা লেখা হয় সেটা বিজয়ীর হাতে লেখা বাকোয়াজ। কিন্তু ‘ইতিহাস লেখার ইতিহাস’টি লিখতে পারেন একজন সত্যিকারের লেখক যিনি নিজেই একটা জীবন্ত দলিল। তার হৃদয়ে জমা ব্যথা, দাগ আর নির্যাতনের চিহ্নগুলোই মূলত সেই ইতিহাস যা শাসকের চোখ এড়িয়ে লিখে রাখে মহাকাল। কারণ সেটাই মানবাধিকারের পক্ষে মানুষের সংগ্রামের একমাত্র ইতিহাস।
প্রিয় পাঠক-নারীবাদ, মৌলবাদ থেকে শুরু করে কাঁটাতার এবং বিভেদে ভরা দুনিয়ায় তথাকথিত রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় আইনকে চ্যালেঞ্জ করা একজন নারীর বয়ানে শ্বাসরুদ্ধকর ইতিহাস লেখার এই ঐতিহাসিক যাত্রায় আপনাকে স্বাগতম!’
এদিকে, মনপুরা’ খ্যাত নির্মাতা নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমে বিরুদ্ধে আনা লেখিকার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘এই মেয়েটি নিজেকে ভাইরাল করার জন্যই এসব লিখেছে। এটা ওর বিষয়। সে আপন মনের মাধুরীতে বইটি লিখেছেন। এসব নিয়ে কথা বলতেও আমি ইচ্ছুক না।’
বইয়ের লেখিকাকে কি আপনি চেনেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। সেভাবে চিনিও না, তবে অনেক বছর আগে টুকটাক কথা হয়েছিল। তাও অন্য একজনের মাধ্যমে।’