ফাইনাল জিতে শের-ই বাংলার সবুজ আঙিনা তখন রুপ নিয়েছে উৎসবের মঞ্চে। পরিবার-পরিজন নিয়ে হাসিমুখে সেলফি তুলছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ক্রিকেটাররা। ট্রফি নিয়ে সাফল্য উদযাপনে শামিল হন তখন নাফিসা কামালও।
তবে এসবের মধ্যেই দলের চেয়ারপার্সন শুরু করেন পরের আসরের দল গোছানোর কাজ!
চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা কুমিল্লার নিয়মিত ঘটনা। ব্যতিক্রম ঘটেনি বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারিয়ে চতুর্থ শিরোপা জয়ের পরও। অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ও প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে আসেন নাফিসাও।
বিপিএলের প্রতি আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকানা ও দলের নাম বদলে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এর মাঝেও ব্যতিক্রম কুমিল্লা। ২০১৫ আসরে বিপিএলে নাম লেখানোর পর একই কাঠামো ধরে রেখে এগোচ্ছে দলটি। প্রত্যাশিত সাফল্যও ধরা দিচ্ছে। গত সাত আসরের মধ্যে ছয়টিতে অংশ নিয়ে চারবারই ট্রফি উঠেছে তাদের হাতে।
এমন সাফল্যের পেছনে ধারাবাহিক অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন দলের চেয়ারপার্সন। বিপিএলে নিয়মিত থাকার কারণে বিদেশি খেলোয়াড় পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হয় না তাদের।
“আমরা ২০১৫ সাল থেকে এখানে আছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে ধারাবাহিকতাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখন যদি বিদেশি খেলোয়াড় আনার কথা বলি, শুধু টাকা থাকলেই যে বিদেশি খেলোয়াড় পাওয়া যাবে, তা নয়… আমরা বিদেশি খেলোয়াড়দের এজেন্টদের কাছ থেকে প্রাধান্য পাই। তারা বিপিএলে আসতে চাইলে প্রথম কলটা আমরা পাই। অন্য দলের তুলনায় অনেক আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।”
“আমি (গত) অক্টোবর মাসে সুনিল নারাইন ও মইন আলির সঙ্গে চুক্তি করেছি। ওদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম এলিমিনেটর ও ফাইনালের জন্য। অনেক দল হয়তো ভাবতেই পারবে না, অক্টোবর মাসে বসে ফাইনালের জন্য খেলোয়াড় দলে নেওয়া। আমরা ওভাবে চিন্তা করি। অনেক লম্বা চিন্তা করি এবং আমাদের নেটওয়ার্ক এখন অনেক শক্ত। কারণ আমরা এখানে অনেক দিন ধরে আছি।”
বিপিএলের সঙ্গে একই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টোয়েন্টি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলটি২০ হওয়ায় বিদেশি খেলোয়াড় পাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে প্রায় সব দলকে। এ দিকটিও দারুণভাবে সামলেছে কুমিল্লা। টুর্নামেন্ট শুরুর দিন থেকে প্রত্যেক বিদেশি খেলোয়াড়ের আসা-যাওয়ার ব্যাপারে পরিষ্কার তথ্য ছিল তাদের কাছে।
“এই বিপিএলে আমরা দেখেছি সব দল, ধারাবাহিকভাবে বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে ভুগেছে। ফলে মনোযোগটা খেলার চেয়ে চলে গেছে বাইরে। বিদেশি খেলোয়াড়েরা প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেছে। এই ক্ষেত্রে আমরা প্রথম থেকেই জানতাম কোন সময় আমাদের কোন খেলোয়াড় আসবে-যাবে। সে জন্য আমাদের চিন্তাটা অন্য দিকে যায়নি। খেলার মধ্যেই ছিল। বাইরের বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়নি।”
এলিমিনেটর বা ফাইনালে উঠতে পারবেন কি না, তা নিশ্চিত না হয়েই নারাইন-মইনের সঙ্গে চুক্তি করে অন্যদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে যায় কুমিল্লা। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তার অংশ হিসেবেই উৎসবের আবহের মাঝে শিরোপা ধরে রাখার জন্য পরের বিপিএলের দল গোছানোর কাজেও হাত দিয়ে ফেলেছে তারা।
“আজকেই (বৃহস্পতিবার) আমি আগামী বিপিএলের জন্য দুজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেছি। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের কাজ এখনই শুরু হয়ে গেছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ। আজকে থেকেই আমাদের পরবর্তী বছরের পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে।”
এবারের আসরে কুমিল্লার শুরুটা ছিল যাচ্ছেতাই। প্রথম তিন ম্যাচ হারে টুর্নামেন্টের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। সেখান থেকে টানা ১১ ম্যাচ জিতে বিপিএল রেকর্ড গড়েই শিরোপা নিজেদের করেছে তারা।
নাফিসা জানালেন, শুরুতে হ্যাটট্রিক হারের পরও চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না তার।
“বিশ্বাস ছিল চ্যাম্পিয়ন হব। কীভাবে চ্যাম্পিয়ন হব, ওই পরিকল্পনাটা নিয়ে একটু নতুন করে চিন্তা করেছিলাম। চ্যাম্পিয়ন না হওয়া ছাড়া কোনো অপশন থাকে না। (তিন হারের পর) ঘুরে দাঁড়ানোটা একটু কঠিন ছিল। সেজন্য আমরা চট্টগ্রামে আলোচনায় বসেছি। কী করলে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে, সেটা নিয়ে কাজ করেছি।”
এছাড়া কুমিল্লার মেয়ে হওয়ায় এই জেলার দলের প্রতি বাড়তি টান অনুভব করেন দলটির চেয়ারপার্সন।
“কুমিল্লার জন্য আমার একটা টান কাজ করে। আমি অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনলে অবশ্যই এটা হতো না। আমার বাবা (সাবেক বোর্ড সভাপতি ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল) কুমিল্লার জন্য যে ভূমিকা পালন করেন, যে সম্মানটা উনি কুমিল্লায় পান…আমার বাবার মেয়ে হিসেবে, কুমিল্লার মেয়ে হিসেবে অবশ্যই কুমিল্লার প্রতি আমার অন্য রকম একটা ভালোবাসা কাজ করে।”